পুলিশি বাঁধা ঠেলে মাঠে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মাহির আমির মিলন, জবি প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৮:২৪ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২১ রোববার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং একমাত্র কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ "ধূপখোলা মাঠকে" রক্ষার্থে বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
(রবিবার) সকাল সাড়ে ১১টায় জবি ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আসাদুজ্জামান রাজুর সঞ্চালনায় মাঠ ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ নেই, হল নেই, কোনো ছাত্র সংসদ নেই সেটা কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না আমরা মনে করি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হাওয়ার পর থেকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা শুধু আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে যাবো। একের পর এক ভূমিদস্যুরা আমাদের সম্পদগুলো নিয়ে যাবে এটা তো হতে পারে না। আজ আমাদের থাকার কথা পড়ার টেবিলে কিন্তু আমরা এখন মানববন্ধন, স্লোগান, সমাবেশ, মিছিল নিয়ে ব্যস্ত।
এই সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রিকেট দলের সদস্য আখি বলেন, প্রাইভেট আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলো না আজ। আমরা কি আজ তাহলে আবারও একটা সীমানা প্রচীরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এই প্রশাসনকে আমরা ধিক্কার জানায়।
জবির ১৩ তম ব্যাচের রাকিব হোসেন বলেন, প্রশাসন একটা খুঁটির সমান স্তম্ভ কিন্তু জবি প্রশাসনের মতো এমন প্রশাসনের কোনো দরকার নেই আমাদের। যে প্রশাসন শুধুমাত্র লাখ লাখ হাতিয়ে নিয়ে বসে থাকে এসি রুমের ভিতরে এমন নির্বুদ্ধিতা হীন প্রশাসনকে চাই না আমরা।
দুপুর ১২ টা নাগাদ সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে মাঠ রক্ষার দাবিতে নানা স্লোগান দেয়। এ-সময় তারা স্লোগানে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কালো হাত ভেঙে দাও, ঘুরিয়ে দাও এবং ডিএসসিসি মেয়রের তীব্র সমালোচনা করেন।
তারপরে মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস ঘুরার পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক হতে বের হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক অতিক্রম করলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। মিছিলটি মাঠের উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা করলে একপর্যায়ে লক্ষ্মীবাজারে এসে কোতোয়ালি থানার এডিসি মুহিত ও এস আই ওয়াসিম মিছিলের সামনে এসে বাঁধা দেয় কিন্তু শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাঁধা ঠেলে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ধূপখোলা মাঠে প্রবেশ করে।
শিক্ষার্থীরা কিছুসময় ধরে পুরো মাঠের কাজের অগ্রগতি দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে কিছু শিক্ষার্থী মাঠের এক দক্ষিণ - পশ্চিম অংশের একটি মাটি ভরার ট্রাকের চাবি নিয়ে চলে আসেন এবং বলেন কাজ বন্ধ করতে। তারপরে শিক্ষার্থীরা মাঠে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দিতে মাঠের মূল ফটকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে স্থানীয় এলাকা বাসীকে আহবান জানান তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠ রক্ষার জন্য। পুনরায় মিছিলটি ধূপখোলা মাঠ থেকে ক্যাম্পাসের ভিতরে এসে শেষ হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিতে গেন্ডারিয়া থানার পুলিশ আসলেও শান্তিপূর্ণ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে বাঁধা দেয়নি। তবে, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন অবৈধভাবে মাঠ দখলের প্রতিবাদে ডিএনসিসির বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে গেন্ডারিয়া থানা মামলা নেয়নি।
মাঠ আন্দোলনের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান রাজু বলেন, আমরা যতদিন পর্যন্ত নতুন ক্যাম্পাসে না যাবো ততোদিন অবধি এই মাঠ আমরা ছাড়বো না। আমরা আবার আসবে মাঠে আজ চাবি নিয়েছি পরেরবার সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হবে। মাঠকে কোনোভাবে দখল হতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা আইনি লড়াইয়ে নামবো। সেই সাথে আমাদের আগামী কর্মসূচি রাতে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
মাঠ ইস্যুতে প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি তবে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল ব্যাপক সংখ্যক হারে। প্রক্টরিয়াল বডির আদেশে কোতোয়ালি থানার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো ক্যাম্পাসে যাতে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি না করে আন্দোলনকারীরা।