বৃহস্পতিবার   ৩১ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ১৫ ১৪৩১   ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

দুই বছর না যেতেই চক্রাকার বাসসেবা গুটিয়ে নিলো বিআরটিসি

তরুণ কন্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত : ০৪:১৫ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার

নাগরিকদের নিরাপদ এবং আরামদায়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও উত্তরায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) চক্রাকার বাসসেবা চালু করেছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। কথা ছিল, ঢাকার অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একই ধরনের সেবা চালু করা হবে। তবে চালু হওয়ার দুই বছর না যেতেই এ সেবা নীরবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে এ সেবা চালু করা হয়েছিল তার সুফল মেলেনি।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে গত দেড় বছর রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল কখনো সীমিত, কখনো বন্ধই ছিল। এখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। মহামারি শুরুর আগে চালু থাকা চক্রাকার বাসসেবা আর চালু হয়নি।

 এই সেবা চালু করার পর নাগরিকরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। তারা স্বাচ্ছন্দ্যে বাসে যাতায়াত করতে পারতেন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু ও অভিভাবকরা বেশি উপকৃত হয়েছেন। ডিএসসিসি মেয়র দেশে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে 

আগামীকাল রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি চলছে। কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলবে। তখন গণপরিবহনে চাপ আরও বাড়বে। চক্রাকার বাসসেবা চালু থাকলে ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকার মানুষের যাতায়াত আরও সহজ হতো বলে মনে করেন এলাকা দুটির বাসিন্দারা।
বিআরটিসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চক্রাকার সেবা দিতে গিয়ে বিআরটিসি অনেক লোকসান করেছে। এখন তাই নতুন করে ওই সেবা চালু করার পরিকল্পনা নেই।

বিআরটিসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটি গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কথা ছিল, এই কমিটি উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক গণপরিবহন নিয়ে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। তারই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল এলাকাভিত্তিক চক্রাকার বাস সেবা। পরে ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ ধানমন্ডি-নিউ মার্কেট-আজিমপুর এলাকায় (প্রায় ১০ কিলোমিটার) চক্রাকার বাস সেবা চালু করা হয়।

 ধানমন্ডি এবং উত্তরায় চক্রাকার বাস সেবা চালুর পর থেকেই বিআরটিসি লোকসান দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল যাত্রী সংকট। তাই এখন নতুন করে এই সেবা চালু করার কোনো উদ্যোগ নেই 

এর দুই মাস পর ২৭ মে উত্তরার দুটি রুটে চক্রাকার বাসসেবা চালু হয়। এর মধ্যে আলাওল অ্যাভিনিউয়ের পূর্ব প্রান্ত থেকে হাউস বিল্ডিং, খালপাড় হয়ে উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে একটি সেবা। আরেকটি বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিমে থাকা বিভিন্ন সেক্টরের ভেতর দিয়ে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের স্লুইস গেট পর্যন্ত। তখন বলা হয়েছিল, পাঁচ থেকে ১০ মিনিট পরপরই এই রাস্তার দুই পাশে বাস পাওয়া যাবে।

তবে গত ৭ সেপ্টেম্বর উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর ঘুরে কোথাও বিআরটিসির ওই সেবার বাস দেখা যায়নি। পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত ধানমন্ডির মিরপুর রোড, ঝিগাতলা, সাত মসজিদ রোড, কলাবাগান, আজিমপুর, পলাশী, এলাকা ঘুরেও কোথাও বিআরটিসির চক্রাকার বাস দেখা যায়নি। এই এলাকার মানুষ যে যার মতো লোকাল বাস, সিএনজি, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করছেন।

ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের বাসিন্দা নাজমুল হাসান। তার বড় ছেলে মেহেদী মিরাজ ঢাকা সিটি কলেজের একাদশের শিক্ষার্থী। বিআরটিসি চক্রাকার সেবা চালু হওয়ার পর সে নিয়মিত বিআরটিসির বাসে করে কলেজে যাতায়াত করতো। এতে তার দিনে যাতায়াত খরচ হতো ২০ টাকা।

নাজমুল হাসান বলেন, ‘এখন বাস না চললে বাধ্য হয়ে রিকশায় ছেলেকে কলেজে যেতে হবে। এতে যাতায়াত খরচ বেড়ে যাবে। তাই সেবাটি আবার চালু করা প্রয়োজন।’

একই দাবি জানিয়েছেন উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকার বাসিন্দা জিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, ‘উন্নত অনেক দেশেই চক্রাকার বাস সেবা রয়েছে। এই সেবা কার্যকর করা গেলে নগরে ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার কমবে। এতে শহরে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে।’

ধানমন্ডি এবং উত্তরার এই চক্রাকার বাস সেবা পরিচালনা করতো বিআরটিসির মতিঝিল ডিপো। এই ডিপো সূত্র জানায়, ওই দুটি এলাকার নাগরিকদের সেবা দিতে ১০টি করে ২০টি বিআরটিসির নতুন বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না।

যানজটের কারণে যথাসময়ে এক টিকিট কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে যাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে যাত্রীরাও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে চান না। তারা নিজ ব্যবস্থাপনায় যার যার গন্তব্যে যান। ফলে বাসে যাত্রী পাওয়া যেতো না। গাড়িতে দিনে যে পরিমাণ তেল খরচ হয় তার টাকাও উঠতো না। এভাবে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত সেবা চালু ছিল। পরে করোনার অজুহাতে সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই সেবা তারা আর চালু করেননি। কবে চালু হবে তাও কারও জানা নেই।

এ বিষয়ে জানাতে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে মতিঝিল বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক মাসুদ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ধানমন্ডি এবং উত্তরায় চক্রাকার বাস সেবা চালুর পর থেকেই বিআরটিসি লোকসান দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল যাত্রী সংকট। তাই এখন নতুন করে এই সেবা চালু করার কোনো উদ্যোগ নেই।’

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি এখন বিদেশে অবস্থান করায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে ডিএসসিসি মেয়রের সঙ্গে কথা বলে চক্রাকার বাস সেবা চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এই সেবা চালু করার পর নাগরিকরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। তারা স্বাচ্ছন্দ্যে বাসে যাতায়াত করতে পারতেন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু ও অভিভাবকরা বেশি উপকৃত হয়েছেন। ডিএসসিসি মেয়র দেশে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’