কোম্পানীগঞ্জে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ, থানায় মামলা
জাকির হোসেন সুমন সিলেট
প্রকাশিত : ০৫:৪০ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২১ বুধবার
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এক মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ বুধবার রুবেল বিশ্বাস (২২) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন ওই কিশোরীর মা। ওই যুবক রুবেল বিশ্বাস উপজেলার বেতমুড়া গ্রামের মুক্তেশ্বর বিশ্বাসের ছেলে। এর আগে ভারসাম্যহীন অবস্থায় ঘুরতে থাকা কিশোরীর পরিবারের সন্ধান পেতে সিলেট ভয়েসে সংবাদসহ একাধিক পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ হয়। সে সংবাদ দেখে কিশোরীর মা যোগাযোগ করেন।
এদিকে গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের সিঁড়ির নিচে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে একা পেয়ে রুবেল বিশ্বাস নামের এক গৃহশিক্ষক জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এমন সময় প্রতিবন্ধী মেয়ের চিৎকার শুনে রায়হান ও রুমান নামের দুই যুবক ছুটে আসে। এ সয়ম রুবেল বিশ্বাস পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে রায়হান ও রুমান তাকে আটক করে উপস্থিত মুরব্বি শামছু মিয়া, ইকবাল হোসেন,নিকসন আচার্যসহ স্থানীয়দের কাছে আটক রাখেন।
মেয়ের বাবা-মায়ের নাম ও ঠিকানা না পেয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী ও অভিযুক্তের স্বীকারোক্তিতে মুরব্বিরা রুবেল বিশ্বাসের আত্মীয় উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী সুকুমার বিশ্বাসের কাছে প্রতিবন্ধী কিশোরী ও অভিযুক্তকে শর্তসাপেক্ষে জিম্মায় রাখেন।
প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবারের ঠিকানা খুঁজার জন্য (জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও ফেসবুক মাধ্যমে প্রচার) সুকুমার বিশ্বাসকে তিন দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারসাম্যহীন ওই কিশোরীর পরিবারের সন্ধান পেলে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সকলে সহযোগিতা করবে বলেও জানান। তিন দিনের মধ্যে ভারসাম্যহীন কিশোরীর পরিবারের সন্ধান না পেলে ছেলে ও প্রতিবন্ধীকে থানায় সোপর্দ করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।
উপস্থিত মুরব্বি সামছু মিয়া ও ইকবাল হোসেন জানান,প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত রুবেল বিশ্বাসকে আটক করা হয়। মেয়েটি ভারসাম্যহীন তাই তার ঠিকানা বলতে পারছিল না। তার দায়িত্ব কেউ নিতে চাইছিল না, ন্যায় বিচারের জন্য ও মেয়েটির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এবং মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পাওয়ার স্বার্থে অভিযুক্ত যুবকসহ মেয়েকে সুকুমার বিশ্বাসের জিম্মায় রাখা হয়েছিল। একাধিক গণমাধ্যমের নিউজে মেয়েটি তার পরিবার খুঁজে পেয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে রুবেল বিশ্বাসকে আসামী করে ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে। আমরা ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রায়হান ও রুমান জানান, মহিলা কণ্ঠে চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে গিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করি। আমাদেরকে দেখে রুবেল বিশ্বাস পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমাদের ডাকাডাকি শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে আটক করে।
প্রতিবন্ধী ওই কিশোরীর মা বলেন,গেল শুক্রবার সে তার বাবার সাথে শাহজালাল মাজার জিয়ারত করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির করে তাকে মেলেনি। মঙ্গলবার রাতে ডাকঘর গ্রামের একজন আমাকে জানান সাংবাদিক কবির আহমদ নামের একজন আমার মেয়ের পরিবারের সন্ধান চেয়ে নিউজ করেছে।
নিউজ থেকে মোবাইল নাম্বর সংগ্রহ করে সুকুমার বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করে রাতেই থানা বাজার সাংবাদিক আবিদুর রহমানের অফিস থেকে মেয়েকে নিতে আসি।
এসময় তারা আমাকে ঐ ঘটনা না বলেই আমার মেয়েকে বুঝিয়ে দিতে চায়।পরে রায়হান ও কামরানসহ কয়েক ছেলের কাছ থেকে ঘটনা শুনি। এর মাঝেই থানা থেকে পুলিশ আসে।
এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা করেছি
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভূমি অফিসের কর্মচারী সুকুমার বিশ্বাস বলেন,ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রতিবন্ধী মেয়ের পরিবারের সন্ধান পাওয়া জরুরি ছিলো।
তাই আমি সাংবাদিক কবির আহমদ ভাইয়ের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তিনি ফেসবুক পোষ্ট ও সিলেট ভয়েসে নিউজসহ একাধিক পত্রিকায় নিউজ করায় কিছুক্ষণ পরেই মেয়ের মা আমার নাম্বরে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করেন।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল জানান, মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েটির মা বাদী হয়ে রুবেল বিশ্বাসকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। যুবককে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।