এক দশক পর নীলফামারীর বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু
মোঃ নাঈম শাহ্, নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৫:৪৩ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২১ শনিবার
বৃষ্টির পানির অভাবে যখন কৃষকেরা জমিতে হাল চাষ দিতে পারছে না তখনই আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে দেশের প্রথম সেচ প্রকল্প নীলফামারীর বুড়ি তিস্তা। দীর্ঘ দশ বছর থেকে বন্ধ থাকা সেচ প্রকল্প থেকে আবারো সেচ সুবিধা পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে সেচ এলাকার ১৫ হাজার কৃষকের মধ্যে। প্রকল্পটি থেকে এবার সেচ সুবিধা পেয়ে আমন চারা রোপণ এবং পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এসব কৃষক। গত দশ বছর থেকে কমান্ড এরিয়ায় সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ৬০হাজার মেট্রিক টন ফসল থেকে বঞ্চিত হয়েছে কৃষকেরা। যার বাজার মুল্য আনুমানিক প্রায় ১৩২ কোটি টাকা। সব ঠিক থাকলে চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা মূল্যের ১৬হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী সংস্লিষ্টরা।
জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের খারিজা গোলনা গ্রামের কৃষক মহির উদ্দিন (৫৫) বলেন,‘এবার আকাশোত পানি নাই, জমি শুকি ছিল। দুই বিঘা জমিত আমন চারা লাগেবার জন্য খুব চিন্তাত ছিনু। সেই চিন্তা দুর করি দেইল ক্যানেলের পানি।
কালিগঞ্জ এলাকার কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, সেচ পাম্প দিয়ে আবাদ করতে গিয়ে লোকসান গুণতে হয়েছে। যাদের আর্থিক অবস্থা একটু ভাল তারা পাম্পের সাহায্যে সেচ দিয়ে আবাদ করেছে। আমরা যারা ছোট কৃষক তাদের পক্ষে পানি কিনে আবাদ করা সম্ভব না। এতে লোকসান হয়। এবার তিস্তার পানিতে সেই লোকসান গুনতে হবে না।
বঙ্গবন্ধু বাজার এলাকার কৃষক জামিয়ার রহমান বলেন, ব্যারেজের উজানে জলাধার মাছ চাষের জন্য লীজ দেয়ায় আমরা অনেকদিন প্রকল্পের পানিতে আবাদ করতে পারি নাই। তখনকার সময় আমাদের জমি পতিত পড়ে ছিল। আমার যে চার বিঘা জমি আছে অনেক বছর আবাদ করতে না পারায় পরিবার চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। এবার বিনা পয়সায় সেচের পানি পেয়ে আমরা খুব খুশি।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ ১০ বছর বন্ধ ছিল বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পটির কার্যক্রম। সে মামলার সমাপ্তি ঘটলে সংস্কার করা হয় বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের ১১কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান খাল ও ১৯কিলোমিটার দীর্ঘ চারটি শাখা খাল। এসব খালের পানি ৫৭টি আউটলেটের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্নভাবে জমিতে সরবরাহ পাওয়ায় পর দুর হয়েছে পানির মহাসংকট। ফলে চলতি আমন আবাদে অনাবৃষ্টির ধকল থেকে রক্ষা পেয়েছে ১৫ হাজার কৃষক।
সূত্রমতে আরো জানা যায়, জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাত ইউনিয়নের অনাবাদী জমিতে ফসল ফলাতে ষাটের দশকে নির্মাণ করা হয় এই বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্প। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০১০সাল পর্যন্ত সেচ সুবিধা পায় কৃষকেরা। বিগত ২০১০সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যারেজের উজানে এক হাজার ২১৭ একরের জলাধারাটি মৎস্য চাষের জন্য একটি সংস্থাকে লীজ দেয়ায় বন্ধ হয়ে যায় সেচ কার্যক্রম। এতে কমান্ড এরিয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আমন, ইরি বোরো ধান, গম সহ অন্যান্য চাষাবাদ। এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে চলমান থাকা মামলাটি গত ২০১৮সালে খারিজ হয়ে যায়।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলা সংক্রান্ত একটি জটিলতায় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে সেচ সুবিধা। পরিশেষে ২০১৮ সালে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। বর্ষার চলতি মৌসুমে যে পরিমান বৃষ্টির প্রয়োজন জেলায় এবার তার অর্ধেকও পাওয়া যায়নি। তাই আমরা কৃষকদের চাহিদা কথার ভেবে সামান্য কিছু সংস্কার করে সেচ সুবিধা প্রদান করেছি। আশা করছি প্রকল্প এলাকায় ছয় হাজার মেট্রিক টন ধান বাড়তি উৎপাদিত হবে।