আগে থেকেই আছে রাস্তা, তবু পাহাড় কেটে সড়ক করছে এলজিইডি
তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত : ১২:১৯ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় একটা সড়ক বানাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। সড়কটির গন্তব্য রুমা সদর থেকে গ্যালাঙ্গিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত। এজন্য কুড়িটির মতো পাহাড় কাটতে হবে। সাঙ্গু নদীর ওপর একটা সেতু বানাতে হবে। এই যে এতো মহাযজ্ঞ, তা যেন স্পর্শই করছে না স্থানীয় জনগণকে। তারা বুঝতে পারছে না, কেন এই সড়ক? কী এর দরকার? কারণ রুমা থেকে গ্যালাঙ্গিয়া যাওয়ার একটি সড়ক অনেক আগে থেকেই আছে! সেই পথেই তারা সবাই যাতায়াত করে।
রুমার স্থানীয় সাংবাদিক শৈহ্লাচিং মারমা জানান, রুমার এম্পু পাড়া থেকে গ্যালাঙ্গিয়া পর্যন্ত একটি সড়ক কিছুদিন আগেই নির্মাণ করা হয়েছে। এখন সেই একই ইউনিয়নে যেতে এলজিইডির আরও একটি সড়ক নির্মাণ, সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
এলজিইডির অর্থ ব্যয় অবশ্য এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রস্তাবিত এই সড়কের জন্য ইতোমধ্যে দুটি গার্ডার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া এই দুটি ব্রিজ তৈরিতে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪ টাকা। এই দুই সেতুর একটি এমন এক জায়গায় শেষ হয়েছে, যার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে একটি পাহাড়। এখন এই সেতুর অপর পারের রাস্তা অগ্রসর করতে গেলে পাহাড় কাটতে হবে। একটি পাহাড় কাটলেই যে হবে, তা নয়। সড়কটি সম্পূর্ণ করতে গেলে ছোটো-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে কুড়িটির মতো পাহাড় কাটতে হবে। কেবল পাহাড় কাটাই নয়, গ্যালাঙ্গিয়া পর্যন্ত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে সাঙ্গু নদীর ওপর নির্মাণ করতে হবে আরও একটি ব্রিজ।
পুরো কাজ শেষ হতে, অর্থাৎ পাহাড় কাটা, সাঙ্গু নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ ও রাস্তার বাজেট মিলিয়ে আরও খরচ হবে ১০ কোটি টাকার উপরে।
স্থানীয়রা জানান, যেহেতু গ্যালাঙ্গিয়া ইউনিয়নটি সাঙ্গু নদীর ওপারে, তাই এ সড়কটি করতে গেলে সাঙ্গু নদীর ওপর আরও একটি ব্রিজ করতে হবে। আর নদীর উপরে ব্রিজ না করলে এ পথে কোনোভাবেই গ্যালাঙ্গিয়া যাওয়া যাবে না। সড়ক তৈরিতে এ পর্যন্ত যা ব্যয় হয়েছে- তার পুরোটাই অপচয় হবে। সামনে আরও যা কিছু হবে- সেগুলোও অপচয়ই হবে।
রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈমং মারমা জানান, এগুলো এলজিইডির কাজ। গ্যালাঙ্গিয়া যাওয়ার জন্য উন্নয়নবোর্ড একটি রাস্তা করেছে নদীর ওপার দিয়ে। কিন্তু এলজিইডির সড়কটি যেহেতু নদীর এপারে, তাই সড়কটি গ্যালাঙ্গিয়া পর্যন্ত নিতে হলে নদীর উপর একটি ব্রিজ করতে হবে। তিনি বলেন, তারপরও এগুলো এলজিইডির বিষয়।
এদিকে, সরকারি কর্মকর্তারা কিন্তু এখনও প্রস্তাবিত নতুন সড়কটি নির্মাণের পক্ষে। বান্দরবান উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াছির আরাফাত বলেন, রুমার এম্পু পাড়া থেকে গ্যালাঙ্গিয়া পর্যন্ত আমাদের একটি সড়কের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এটি শেষ হলে বান্দরবানবাসী সহজে ও অল্প সময়ে গ্যালাঙ্গিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত যেতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুস শাহাদাৎ হোসেন মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের সড়কটি অন্যদিক দিয়ে গ্যালাঙ্গিয়া যাবে। ইতোমধ্যে রাস্তার উদ্দেশ্যে আমরা দুটি ব্রিজ নির্মাণ করেছি।
এলজিইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ দুটি নির্মাণ করেছে মেসার্স আবসার কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স।