নদী খননে পাল্টেছে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের ভাগ্য
মোঃ নাঈম শাহ্, নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৫:০৫ পিএম, ১০ জুলাই ২০২১ শনিবার
খদী খননের মাধ্যমে একদিকে যেমন যৌবন ফিরে পেয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জের নদীগুলো অন্যদিকে পাল্টেছে নদীর চিরচেনা রূপ। দীর্ঘদিন থেকে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা নদীগুলো পুনঃখননের ফলে নদী ফিরে পেয়েছে তার স্বাভাবিক গতি। নদী খননের পূর্র্বে নদীগুলোর অবস্থা ছিল জরাজীর্ন। দীর্ঘদিন থেকে নদীর অধিকাংশ জমি এবং নদীর কিনারা কেটে ভরাট করে সেখানে চাষাবাদ করে আসছিলো প্রভাবশালীরা। নদীর ভেতর চাষাবাদের কারণে নদীর গভীরতা ও প্রশস্থতা গিয়েছিলো হারিয়ে। যার ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহমান গতিপথে বৃষ্টির পানি উজান হতে ভাটিতে যেতে হতো বাধাগ্রস্ত । ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিতো জ্বলাবদ্ধতা। সামান্য পানিতে নিম্নাঞ্চল হতো প¬াবিত। ব্যাপক হারে ক্ষতির সম্মখীন হতো কৃষকেরা। নদী খননের ফলে শুধু কৃষিতেই নয়, প্রভাব পরেছে এ অঞ্চলের দেশীয় মৎস্যচাষের উপরেও। নদী খননের মাধ্যমে চিন্তামুক্ত কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। জীবিকার খোজ পেয়েছে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষেরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহিত এসব নদী ও খাল খননের মাধ্যমে বেড়েছে সেচ সুবিধা, বেড়েছে শষ্য উৎপাদন। বর্ষা মৌসুমে ত্বরান্বিত হয়েছে পানি নিস্কাশন, নদীতে বেড়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ, অস্তিত্ব ফিরে পেয়েছে জীব বৈচিত্র। সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকারের প্রত্যক্ষ নজরদারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন এসব নদী খননের কাজ।
জলঢাকা উপজেলার ধাইজান নদীর তীরবর্তী সুবিধাভোগী কৃষক লিয়াকত আলী বলেন, নদী খোরার কারণে বন্যার পানি থেকে মুক্ত হইছি আমরা। আগে এনা পানিতে হামার আবাদি জমি ডুবি গেছিলো এখন আর যাবে না। পানিলা নদীত চলি যাইবে। এলাকার জেলে সম্প্রাদায়ের কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, নদী খোরার কারণে এ বছর নদীতে মেলা দেশি মাছ পাওয়া গেছে। এতে করে আমাদের আয় রোজগার বাইড়ছে। কিশোগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের মৎস্যচাষী আব্দুর রহমান বলেন, প্রায় প্রতি মৌসুমে বর্ষাকাল আসলে আমরা ভয়ে ভয়ে থাকি। কারণ একটু অতি বৃষ্টি হলেই পুকুর প্লাবিত হয়ে যেত। এ বছর নদী খননের মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমে দ্রুত পানি নিস্কাশন হবে আমরা মনে করি।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র মতে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট বড় নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধানে খনন করা হয়েছে ধাইজান, চাড়ালকাটা, খড়খড়িয়া নদী ও পচা নালা খালসহ মোট ১৩৩ কিঃমিঃ নদী খননে ব্যায় হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা। নদীর পাড়া সংরক্ষনে লাগানো হয়েছে ৪০ হাজার গাছ। সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকারের প্রত্যক্ষ নজরদারীর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের নদী খননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে একটি নদী ও ২টি খাল খনন করা হচ্ছে। ঘৃনাই করতোয়া ৩৫ কিলোমিটার নদী খননে ব্যায় ধরা হয়েছে ৭কোটি ৭৫লাখ , খড়খড়ীয়া শাখা খালের ১৫ কিলোমিটার নদী খননে ব্যায় ধরা হয়েছে ৩কোটি ৫০ লাখ ও বাঙ্গালীপুর জলকরের ২ কিলোমিটার খননে ব্যায় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। নদীর পাড় সংরক্ষনে ২হাজার গাছ রোপন করা হবে।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকার বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই নদী খননের কাজের মাধ্যমে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের উপকৃত হয়েছে। এবং তাদের দীর্ঘদিনের চিন্তা লাঘব হয়েছে।
তিন আরো বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে একটি নদী ও ২টি খাল খনন করা হচ্ছে এবং কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।