অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন
তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট
প্রকাশিত : ০৪:২৭ পিএম, ১০ জুলাই ২০২১ শনিবার
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। তাদের নিহত হওয়ার ঘটনায় এবার সরব হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১০ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে ফেসবুক লাইভে ব্যারিস্টার সুমন এ মন্তব্য করেন।
সেজান জুস হাতে নিয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, রুপগঞ্জে সেজান জুস তৈরি করা হয়। হাসেম গ্রুপ এই সেজান জুস বানায়। এই সেজান বানাতে গিয়েই অর্ধশতাধিক মানুষ পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে তার পাশেই অনেকগুলো লাশ পড়ে আছে। সবগুলো পুড়ে একেবারে কয়লা হয়ে গেছে। আমি আপনাদের একটি জিনিস বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ আগুনে পুড়ে মরতেই পারে। এটা সারা পৃথিবীতেই হয়। কিন্তু যখন অভিযোগ শোনা যায় গেট লাগিয়ে রাখার কারণে বা ছাদে না উঠতে পারার কারণে এতগুলো মানুষ মারা গেছেন। তখন কি আপনার মনে হয় এটা শুধুই এক্সিডেন্ট?
তিনি বলেন, আর একটা জিনিস খেয়াল করেন আমাদের দেশে লেবার ল বা শ্রম আইন আছে। এই শ্রম আইন অনুযায়ী ৫২ জন যদি মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে সর্বোচ্চ জন প্রতি ২ লাখ টাকা দিতে হবে। দুই লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ৪ টাকা দিলেই মালিক হাসেম সাহেবের সব ঝামেলা শেষ। তাহলে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা কি এই ৫২ জনের জীবনের দাম? ৫২ জন এক্সিডেন্টে মারা গেলে ক্ষতিপূরণের মামলা হতে পারে। কিন্তু তাকে যদি হত্যায় সহযোগিতা করা হয়, এই গেট লাগিয়ে রাখার কারণে, গেট লাগিয়ে রেখে যদি মরতে বাধ্য করেন তাহলে এক্সিডেন্টের মামলা হওয়ার কথা নয়। আমাদের প্যানাল কোডের ৩০৪/২ ধারা অনুযায়ী এ ধরনের ডেসপারেট আচরণের কারণে যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজার ব্যবস্থা আছে।
আমি বলছি না যে বিজনেস করতে গেলে আগুন লাগবে না, আগুন লাগবে, আগুনে মানুষ মরতেই পারে। আমাদের মতো দেশে এভাবে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, কিন্তু আপনার আচরণের কারণে, এই গেটটা লাগিয়ে রাখার কারণে যদি মারা যায়। আমরা বলতে পারি এই মানুষগুলোর জীবনের কোনো দাম নেই আপনার কাছে। আমি শুনেছি, এই সেজান জুস নাকি পাকিস্তানি প্রডাক্ট। পাকিস্তান একাত্তর সালে যন্ত্রণা দিয়েছে, এখনও যন্ত্রণা দিচ্ছে। একটা পজিটিভ দিক এই প্রডাক্ট নাকি খারাপ না। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন কতগুলো ঘাম আর রক্তের মধ্যে দিয়ে এই প্রডাক্ট বাংলাদেশে এসেছে, বলেন ব্যারিস্টার সুমন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ব্যবসা করবেন ঠিক আছে। কিন্তু মানুষকে হত্যার দিকে ঠেলে দেবেন না। মানুষ হত্যার মধ্যে দিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারেন না। এ বিষয়ে সরকারের অনেক কিছু করার আছে। এর আগে তাজরিন ফ্যাশনে ১১১ জন পুড়ে ছাই হয়ে গেল, বিচারের তো কিছু দেখা গেল না। সরকারের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে ভালো করে একটি কমিটি করুন। যারা মারা গেছেন তারা এই দুই লাখ করে টাকা পাবেন কি না তাও জানি না। কারণ শ্রমিকরা তো সংঘবদ্ধ না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। এদের থেকে দুই লাখ করে আনাই তো কষ্টকর।
সরকারকে আমি বলব, যদি গেট তালাবদ্ধ থাকার কারণেই শ্রমিক মারা যায়, তাহলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনুন। সরকার থেকে এবং কোম্পানি থেকে নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষগুলো তো ফেরানো যাবে না, অন্তত তাদের আত্মা যেন শান্তি পায়। এই প্রার্থনা করছি, ফেসবুক লাইভে বলেন ব্যারিস্টার সুমন।