৪৯ মরদেহকে করতে হবে ডিএনএ টেস্ট
তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত : ০৭:৫৫ পিএম, ৯ জুলাই ২০২১ শুক্রবার
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানার ভেতর থেকে এক এক করে মরদেহ বের করে আনা হচ্ছে। আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৯ মরদেহের একটিও শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা। আজ শুক্রবার (৯ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি এ কথা বলেন।
এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
তিনি আরও বলেন, আগুনে পুড়ে ঝলসে যাওয়া ৪৯ জনের মরদেহের একটিও শনাক্ত করা যায়নি। মরদেহগুলোর যথাযথ প্রক্রিয়ায় ডিএনএ টেস্ট করা হবে। আত্মীয়দের সঙ্গে ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে পরবর্তীতে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে। প্রয়োজনে তাদের মরদেহ ফ্রিজিং করা হবে। মরদেহগুলো বর্তমানে ঢামেক মর্গে আনা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় নিহতদের ২৫ হাজার ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী। তিনি বলেন, মরদেহগুলো হস্তান্তরের সময় সরকারি নিয়ম অনুসারে নিহতদের স্বজনদের ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আর যারা আহত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ সহায়তা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, কারখানাটির ৫ ও ৬ তলায় এখনও আগুন জ্বলছে। প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৩৫ হাজার স্কয়ার ফিট। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
এর আগে ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক এখনও ওই ভবনের ভেতরে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন অন্যান্য শ্রমিক ও নিখোঁজের স্বজনরা। শ্রমিকদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ছয়তলা ভবনটির মধ্যে চতুর্থতলার শ্রমিকরা কেউ বের হতে পারেননি। সিকিউরিটি ইনচার্জ চারতলার কেচি গেটটি বন্ধ করে রাখায় কোনো শ্রমিকই বের হতে পারেননি। সেখানে ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক কাজ করতেন।
তারা জানান, চতুর্থতলার শ্রমিকদের ইনচার্জ মাহবুব, সুফিয়া, তাকিয়া, আমেনা, রাহিমা, রিপন, কম্পা রানী, নাজমুল, মাহমুদ, ওমরিতা, তাছলিমাসহ প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা কারখানার সামনে এসে ভিড় করছেন। তাদের আহাজারিতে কারখানার চারপাশ ভারী হয়ে উঠেছে। স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আগুন লাগার পরও কারখানা কর্তৃপক্ষ কেচি গেটের তালা না খোলায় শ্রমিকরা বের হতে পারেননি।
কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, মধ্যরাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সকাল ৬টার দিকে আবার কারখানার চারতলায় আগুন বাড়তে থাকে। আগুন নিয়ন্ত্রণের আগ পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় আগুন লাগে।
আগুন লাগার পরেও গেট খোলেনি কর্তৃপক্ষ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকালে লাগা আগুন একনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এদিকে কারখানার আগুন নেভাতে দেরির অভিযোগ করে একটি ভবনে ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনের পাশের ভবনটিতে শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে তারা ভাঙচুর চালান। ওই সময় ওই ভবনের কাছে সড়কে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ ১০ থেকে ১২টি গাড়িও ভাঙচুর করেন তারা। লাঠি হাতে থাকা বিক্ষুব্ধ লোকজন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবোরধ করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেন। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।