সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বন্ধ হোক ভিকটিম ব্লেমিং - আয়েশা সিদ্দিকা

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৫:০২ পিএম, ২২ জুন ২০২১ মঙ্গলবার

পরীমনি দেশের প্রধান সারির একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। কয়েকদিন আগে তিনি নিজের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মামলা করেন। এর আগে তিনি ঘটনার বর্ননা দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। সেই পোস্টে তিনি মামলা করতে পারছেননা বলেও অভিযোগ করেন।

ঘটনার পর সরগরম হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।তার সেই পোস্ট থেকে শুরু করে সর্বত্র চলে তাকে নিয়ে কটুক্তি। কেন এত রাতে ক্লাবে গেলেন, কি করতে গিয়েছিলেন? তার সাথে তো এমনই হওয়া উচিত। কেউ কেউ তার ব্যক্তিগত জীবন টেনে বলছেন “সে তো নিজেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সাথে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়, এমন মানুষের আবার ধর্ষন কি?”

শুধু পরীমনি নয়। ভিকটিম যখন নারী তখন সে কোন যৌন নির্যাতনের শিকার হলে আমাদের সমাজ তাকেই দোষারূপ করতে শুরু করে। স্যোশাল মিডিয়া এখন মেয়েদের আক্রমনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এখানে যেন নিজেই একেকজন বিচারকের ভূমিকায় নেমে যায়। এরকম সামাজিক অপবাদ একেকজন নারীকে পঙ্গু করে দেয় মানসিকভাবে, সামাজিকভাবে হতে হয় অপদস্থ। কোন কোন ক্ষেত্রে ঘটে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও।

আমরা একদিকে জ্ঞান বিজ্ঞানের নানান পর্যায়ে উন্নত হচ্ছি। অন্যদিকে তেমনি নারীর বিষয়ে চিন্তা ভাবনায় যেন আমরা ততোটাই ফিরে যাচ্ছি  বর্বরতার যুগে। দেশের নারীরা শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র এরকম নানাস্তরে এখন এগিয়ে যাচ্ছে বীরদর্পে। আর তার চলার পথ রুখতেই যেন একটি গোষ্ঠী তাদের আবদ্ধ করতে চাইছে সুকৌশলে। কখনও কথা দিয়ে, কখনও নির্যাতন করে আবার কখনওবা যৌন নির্যাতন করে।

কোন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হলেই প্রথমেই এ্যাটাক করা হয় তার পোশাক নিয়ে, তারপর  তার চরিত্র, ইতিহাস খুঁজতে শুরু করা হয়। অথচ ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধা, হিজাবি নারীও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন কত নারী ঘর থেকে শুরু করে রাস্তা, কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন সে হিসাব কজনই বা রাখি? দুই একটা ঘটনা সামনে আসলে আমরা নড়েচড়ে বসি তার চেয়ে বেশি তখন শুরু হয়ে যায় ভিক্টিম ব্লেমিং।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পিংক মুভিতে নারীদের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী মেসেজ দেয়া হয় যার মূল বিষয়টি ছিল “নো মিনস নো” বা “না মানে না”। যাতে দেখানো হয় কয়েকজন মেয়ে তাদের ছেলে বন্ধুদের সাথে একটি রিসোর্টে বেড়াতে যায় এবং সেখানে তাদেরকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আর এ ঘটনার বিচার চাইতে গেলে সমাজ এমনকি সর্বত্র তাদেরকেই দোষারুপ করা হয়। এ যেন আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। শেষে একজন প্রবীন আইনজীবী দাঁড়ান তাদের পক্ষে। এবং এই সত্যটি প্রতিষ্ঠা করেন যে কেউ যখন যৌন  সম্পর্ক স্থাপনে না করবে সেটা না ই।

এর মানে হচ্ছে একজনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা করে তবে সেটা অবশ্যই গুরুতর অপরাধ। একজন স্ত্রীও তার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলতে পারেন যদি তাকে জোরপূর্বক বাধ্য করা হয়। এমনকি একজন যৌনকর্মীর ইচ্ছের বিরুদ্ধেও তাকে বাধ্য করলে যেটাও ধর্ষন বলে বিবেচিত হবে। আর এর জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন ভিকটিম এবং এটি গুরুতর অপরাধ।

কিন্তু আমরা কি দেখি? বাস্তবে একজন যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া নারীকে পাল্টা আক্রমনের শিকার হতে হয়। হিজাব পরিহিত তনু থেকে আধুনিক পোশাকের পরীমনি সকলের আক্রমনের জায়গা কখনও তার চরিত্র, কখনও তার চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

একজন নারীকে আর কতকাল এসব সহ্য করে পথ চলতে হবে? কবে বন্ধ হবে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ? আর হা আপনাদের বলছি, ভিকটিম ব্লেমিং বন্ধ করেন । মনে রাখবেন, আপনার জন্ম হয়েছে একজন নারীর গর্ভে। তাই একজন নারীকে আপনার পছন্দমতো রঙ মেখে উপস্থাপন করবেননা। এতে অপমানিত হবেন আপনার মা নিজেই।

লেখক
আয়েশা সিদ্দিকা
স্যোশাল এক্টিভিস্ট, কলামিস্ট।