শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ১৭ ১৪৩১   ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

দেশের সংস্কৃতি মৃত্যুর পরে নেতাদের মূল্যায়ন-কাজে নয় কথায়

নুরুজ্জামান শেখ, শরীয়তপুর

প্রকাশিত : ১২:৩৬ পিএম, ৩১ মে ২০২১ সোমবার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শিষ্য নেতাদের একটি বক্তব্য দেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আসলে ঐ সংস্কৃতিটা  কি সবারই জানতে ইচ্ছা করে। আসলে আমি যে সংস্কৃতির কথা বলব ওটা সম্পর্কে সবারই জানা আছে। তবুও বলছি আমার লেখার মাধ্যমে। বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের কর্মীর মৃত্যুর পরে তাদের জানাজায় গিয়ে জনগণের সামনে যে কথাগুলো বলেন তাতে মনে হয় ওই মৃত্যু ব্যক্তির পরিবারের ভবিষ্যতে আর কোন চিন্তা নাই। তারাই  সব কিছু দেখবে। মৃত্যুর দুই চার ছয় মাস চলে গেলে ওই পরিবারের কথা মনে রাখবে যে দূরের কথা ওই কর্মীর নামই ভুলে যায়। জানাজায় গিয়ে ওই শীর্ষ নেতাদের প্রতিশ্রুতি কথাগুলো দেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। দেশের সংস্কৃতি মৃত্যুর পরে নেতাদের মূল্যায়ন হয়, তবে কাজে নয় কথায়।পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে কুল্লি নাফসি জায়িকাতুল মাউত যার অর্থ স্রষ্টার সৃষ্টির প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিছু মৃত্যু আছে খুবই বেদনাদায়ক সহজে ভুলা যায় না, তুষের আগুনের মতন ওই বেদনাটা মনকে সবসময় কুরে কুরে খায়। যেমন পিতা মাতার  আগে পুত্রের চলে যাওয়া, নানা নানির আগে নাতিনাতনীর চলে যাওয়া। আসলে বিধাতার এই নিয়মটা মানতেই হবে। আসার সিরিয়াল আছে যাওয়ার কোন সিরিয়াল নাই। তেমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে গেল শরীয়তপুর সদর পৌরসভা ১ নং ওয়ার্ডের পালং গ্রামের খানবাড়ির আব্দুল মজিদ খান এর  ছোট পুত্র আব্দুল হাকিম খান (৫০) বছর বয়সে হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পিতার আগেই পরপারে চলে গেলেন। গত ২৯ মেয়ে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি  শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। কিছু কথা: জীবন সংগ্রামে জয়ী' এক পুরুষ আব্দুল হাকিম খান (৫০)। শৈশব কাল থেকেই ছিলেন অত্যন্ত চতুর হাস্যজ্জল সদালাপী। সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ভালো। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জীবন সংগ্রামে নিয়মিত যুদ্ধ করে গেছেন জীবনের সাথে। তবে তার জন্মটা হয়েছে আওয়ামী লীগ পরিবারে।  তার বাবা আব্দুল মজিদ খান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে ভালবেসে জেলা আওয়ামীলীগের দুর্দিনে সব সময় দলের পাশে থেকেছেন। সেই সুবাদে আব্দুল হাকিম খান তার বাবার আদর্শে আদর্শিত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলের দুর্দিনের সময়ে নিষ্ঠার সহিত পাশে থেকেছেন এবং দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন।২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুরে ১ আসনে নৌকার প্রতীক নিয়ে মনোনয়ন পান মোবারক আলী সিকদার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ ঘড়ি মার্কা নিয়ে। ওই সময় শরীয়তপুর সদর পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল হাকিম খান নৌকাকে বিজয় করার জন্য নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ এর ক্যাডার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে নৌকা পরাজয় বরণ করে। শরীয়তপুর ১ আসনে নৌকা পরাজয়ের পর ওই হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ এর ক্যাডার সন্ত্রাসী বাহিনীর দ্বারা আব্দুল হাকিম খান নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এমনকি ওই ক্যাডাররা হত্যা করার জন্য আব্দুল হাকিম খানকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর রহমতে ওখান থেকে বেঁচে ফিরে পৈত্রিক ভিটা মাটি ছেড়ে এবং পরিবারের মায়া ত্যাগ করে জীবন সংগ্রামে রাজধানী ঢাকা পাড়ি জমান। ঢাকায় গিয়ে জীবনের সাথে  সংগ্রাম করে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। রাজনীতি ও সাংবাদিকতা পেশায় ছিল তার অনন্য ভূমিকা।  সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাপ্তাহিক মুক্তির কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও শরীয়তপুর পৌরসভা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং শরীয়তপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত শরীয়তপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করুন। তার জীবন চরিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তার জীবনে সফলতা পেয়েছে। কিন্তু সে সফলতা বেশিদিন ভোগ করে যেতে পারলেন না। গত ২৯  মে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আব্দুল হামিদ খান হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল (৫০) বছর। মৃত্যুকালে তিনি রেখে যান দুই ছেলে এক মেয়ে ও তার সহধর্মিনী। অচিরেই চলে গেলেন পরিবারও আত্মীয়-স্বজনকে কাঁদিয়ে। মৃত আবদুল হাকিম খানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ঐদিন রাতে এশার নামাজের পর পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে। জানাজায় হাজার হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন। আব্দুল হাকিম খানের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুর পালং জাজিরা ১ আসনের সংসদ সদস্য জননেতা ইকবাল হোসেন অপু এমপি, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবেদুর  রহমান খোকা সিকদার, শরীয়তপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র পারভেজ রহমান জন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আলমগীর মুন্সীর, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান খান স্বপন,পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর বেপারী, পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুব রাজনীতির আইকন ,তারুণ্যের প্রতীক বাচ্চু বেপারী, পুরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন শরীয়তপুর পালং জাজিরা  ১ আসনের সংসদ সদস্য জননেতা ইকবাল হোসেন অপু তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আব্দুল হাকিম ছিল অত্যন্ত ভালো মানুষ, তার সাথে আমার সম্পর্কটা ছিল আপন চাচা ভাতিজার সম্পর্ক, ও বড় গলায় আমাকে কাকা বলে ডাকত। আসলে এত অল্প বয়সে ওর  মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছিনা তবুও মানতে হবে। ওর জন্য সকলেই দোয়া করবেন। ওর পরিবারের জন্য আমার দরজা সব সময়ের জন্য খোলা থাকবে। আব্দুল হাকিম খান দলের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ স্বীকার করেছে, তবে সেভাবে দল তাকে কিছুই দিতে পারিনি।