ফরিদপুর সুগার মিল নিয়ে কিছু কথা - আমিনুল ইসলাম শান্ত
তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত : ০৩:৪১ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০২১ মঙ্গলবার
ফরিদপুর সুগার মিল নিয়ে কিছু কথা
আমিনুল ইসলাম শান্ত
ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক এর এক কিলোমিটার উত্তর দিকে এই শিল্প কারখানাটি অবস্থিত।
ফরিদপুর সুগার মিলস লিঃ
বি আই ডি সি এর ব্যবস্থাপনায় ১৯৭৪ সালে এই শিল্প কারখানটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৭৬ সালে সমাপ্ত হয়।
সুনিপুণ অবকাঠামোয় তৈরী এই কারখানা থেকে ১৯৭৬-৭৭ ইংরেজি মৌসুমে চিনি উৎপাদন শুরু হয়।
এই বৃহদায়তন শিল্প কারখানাটিতে চিনি ছাড়াও চিটাগুড়, ব্যাগাস ও জৈব সার মানসম্মতভাবে উৎপাদিত হয়। কারখানা ঘিরে রয়েছে অফিস ও রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স।
প্রতিষ্ঠানটির পশ্চিম পার্শ্বে চন্দনা নদীর তীরে সুশোভিত গেস্ট হাউজ ও অফিসার্স কলোনী। যার মনোরম পরিবেশের ছোঁয়া পেতে পর্যটকদের আনাগোনায় পুলকিত হয় প্রতিদিনের বিকেল।
চিনিকলটির কোল ঘেষে রয়েছে একটি স্বনামধন্য স্কুল, যার নাম “ ফরিদপুর চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় ”। এখান থেকে নানান প্রতিভায় বিকশিত মানুষগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে যথেষ্ট স্বনাম কুড়িয়েছেন । গর্বিত হয়েছে ফরিদপুর, গর্বিত হয়েছে বাংলাদেশ।
এবার আসি চিনির কথায়:
চিনির বিপুল চাহিদা থাকা সত্বেও খুব সামান্য অংশ মেটায় সরকারি চিনিকলগুলো। কিন্তু বছরের পর বছর বেশিরভাগ কারখানাতে লোকসান গুনতে হয়েছে ।
বাংলাদেশের চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাজারের চাহিদার মাত্র চার শতাংশ পূরণ করতে পারে সরকারি খাতের চিনিকলগুলো।সরকার সম্প্রতি ছয়টি চিনিকলের (কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর, রংপুর ও সেতাবগঞ্জ )আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছেন, লোকসানে জর্জরিত চিনিকলগুলো সংস্কার করা হবে ।সর্বমোট বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে চিনি উৎপাদন করা হয়।
শুরুতে ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করার কথা শুনে প্রশ্ন উঠেছে যে, সরকার সব চিনিকলই ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়ার পথে এগুচ্ছে কি-না?
অর্থনীতিবিদরা চিনিকলগুলোকে আধুনিকায়ন ও বেসরকারি করণের পরামর্শ দিলেও চিনিকল বিষয়ক গবেষক মোশাহিদা সুলতানা বলেন যে,“ চিনিকল হলো এমন একটি শিল্প যেখানে সরকার কোন প্রণোদনা দেয় না এবং দীর্ঘকাল এগুলোতে কোন সংস্কার কার্যক্রমও চালানো হয়নি”।
তার মতে, দিনে দিনে চিনিকলগুলোকে লোকসানের ফাঁদে ফেলে এখন বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে, আর এটা করা হচ্ছে বেসরকারি খাতের চিনি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার জন্য।
"চিনিকল গড়ে ওঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে,"
মোশাহিদা সুলতানা, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং গত কয়েক বছর ধরে চিনিকল নিয়ে গবেষণা করছেন।তিনি আরও বলেন,
"মিলগুলোর সাথে আখচাষীরা জড়িত আছে, হাজার হাজার শ্রমিকের সাথে লাখ লাখ কৃষক জড়িত। কর্তৃপক্ষ চাইলেই এগুলোর সবক'টিকেই লাভজনক করা সম্ভব। এতে করে দেশীয় এই শিল্পখাত আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে।"
চিনিকলগুলোর কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ করা হলে চরম ক্ষতি হবে অগণিত মানুষের।
তিনি আরো বলেন,
"চিনিকলে তো শুধু চিনিই হয় না, আরও অনেক কিছুই হয়। এবারে জীবাণুনাশক স্যানিটাইজার পর্যন্ত হয়েছে। চাইলে প্রতিটি চিনিকলকে লাভজনক করা যায় কাউকে ছাটাই না করে ও মিল বন্ধ না করেই,"
সবশেষে ফরিদপুর চিনিকলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনার্থে
- আমিনুল ইসলাম
ফচিক উচ্চ বিদ্যালয় (ব্যাচ -১৯৯৭ইং)
মধুখালী, ফরিদপুর