যন্ত্রাংশ আমদানি কমায় দেশে তৈরি সাইকেলের দাম বেড়েছে
তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত : ০২:১৫ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার

করোনায় দেশের বাজারে বাইসাকেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সেই তুলনায় পার্টস আমদানি হচ্ছে না। করোনার কারণে পার্টস আমদানি কমায় সাইকেলের দাম বেড়েছে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা বা তারও বেশি। জানা যায়, দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ বাইসাইকেলের চাহিদা রয়েছে। চাহিদার ৭০ শতাংশ মেটাচ্ছে আমদানি হওয়া বাইসাইকেল। আর বাকি ৩০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। যদিও তাদের রপ্তানি বাজারের দিকে বেশি নজর। সব মিলিয়ে দেশে বাইসাইকেলের বাজারের আকার প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার।
বাইসাইকেল অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম জাহিদ জানান, দেশের বাজারে বাইসাকেলের চাহিদা করোনাকালে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পার্টস আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সাইকেল ব্যবসার মূল সিজন হচ্ছে নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি। প্রতিবছর এই সময়ে যে ব্যবসা হয় তারা পুরো বছর জুড়ে হয় না। কারণ এ সময়টায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি থাকে। করোনায় আমাদের ব্যবসা ভালো হওয়ার কথা। করোনার শুরুতে আমার সেটাই দেখেছিলাম। কিন্তু পরের সময়ে আমার এর উল্টো চিত্র দেখেছি। হাবিবুল ইসলাম জাহিদ জানান, আগে মেঘনা গ্রুপ যেখানে ১৫ হাজার বাইসাইকেল ডেলিভারি দিয়েছিলো সেখানে ওরা এখন মাত্র ৩ হাজারটি দিয়ে থাকে। অন্যদিকে আরএফএল-এর ও একই অবস্থা। সেইসঙ্গে এসব সাইকেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। অবস্থাটা এমন হয়েছে যে বড়রা বড় হয়েছে। আর আমরা যারা ছোট তারা আরও ছোট হয়েছি। আমাদের দেশের বাজারে দুই দেশ বাইসাইকেলের ব্যবসা করে। একটি ইন্ডিয়া এবং অন্যটি হলো চায়না। আগে যেখানে দেশে ১ লাখ সাইকেল আসত এখন তা ২৫ হাজারে নেমে এসেছে। পার্টস আমদানি কমায় সাইকেলের দাম বেড়েছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার বা তারও বেশি। তিনি জানান, করোনায় সাইকেলের যে চাহিদা ছিলো সেটা আমার ধরতে পারিনি। যদি ধরতে পারতাম তাহলে আমরা পরিবেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারতাম। কারণ সাইকেল হলো পরিবেশবান্ধব বাহন। আমরা সেই সুযোগ অনেকটা হাতছাড়া করেছি। তবে এখনও সময় আছে আমরা এটাকে কাজে লাগাতে পারি। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ব্যবসায়ীরা জানায়, কোভিড-১৯-এর কারণে কাঁচামাল আমদানিতে ধীরগতি রপ্তানিমুখী কারখানার উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করেছে। দেশের বাইরে থেকে কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। সেগুলো এ মুহূর্তে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে চাইলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। তারপরও চেষ্টা আছে স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর। আর এই কারণে বাইসাইকেল রপ্তানিতে লিড টাইম তিন মাস লাগত, এখন তা বেড়ে হয়েছে ছয় মাস।
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আগস্ট মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বাইসাইকেলে রপ্তানি আগের বছরের আগস্টের চেয়ে বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে এক কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয় হয় এক কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর চলতি অর্থবছরের আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলার। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় বেড়েছে ১৩.০৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাইসাইকেল রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে আট কোটি ২৮ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরে বাইসাইকেল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ডলার। স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানান, দেশের বাইসাইকেলের বাজার বাড়ছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে বিপুল চাহিদা আছে। তারা বলেন, স্থানীয় বাজারের ৭০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। অথচ আমদানি নিরুৎসাহিত করা গেলে পুরো চাহিদাই স্থানীয় উদ্যোক্তারা পূরণ করতে পারে। এ জন্য অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানান তারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সস্তা শ্রমিক ও প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। ৩০ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ আসে চীন, কোরিয়া তাইওয়ান থেকে। সাশ্রয়ী হওয়ার ফলে দেশের বাইসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোতে। বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বাইসাইকেল উৎপাদন করে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাইসাইকেল রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে কানাডা, ডেনমার্ক, বেলজিয়ামসহ মোট ১০ দেশে বছরে অন্তত দেড় লাখ বাইসাইকেল রপ্তানি করে প্রাণ-আরএফএল। বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ক্রয়াদেশ আরো বাড়তে শুরু করেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বাইসাইকেল রপ্তানি করে আট কোটি ২০ লাখ ডলারের। রপ্তানির মাসওয়ারি হিসাব বলছে, বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ শুরুর পর থেকে এপ্রিল-মে মাসে রপ্তানি ৫৭ শতাংশ কমে যায় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে। করোনা সংক্রমণ কমে এলে রপ্তানি আবারও বাড়তে শুরু করে। ২০১৯ সালের এপ্রিল-মে মাসে আয় হয়েছিল এক কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ২০২০ সালের একই সময়ে আয় হয় ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার।