একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় জাতির কাণ্ডারি শেখ হাসিনা - আনিসুর রহমান
প্রকাশিত : ০৪:২১ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার
শেখ হাসিনার ইতিহাস একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় তিনি কীভাবে বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হয়েছেন তারই ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন রূপায়নের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারী হওয়ার ইতিহাস। ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ঐ বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মত দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৫শ’ নেতা-কর্মী আহত হন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যঅন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তাঁর লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে- শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গনতন্ত্র, আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়ন, বিপন্ন গনতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, চার বারের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের উন্নয়নের ও বিশ্ব শান্তির রোল মডেল,জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্ম গোপালগঞ্জ জেলায়। দেশের কৃষি সম্পদে সমৃদ্ধ অন্যতম জেলা৷ গোপালগঞ্জ। ১৮১১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর এলাকা ছিল বিশাল জলাভূমি। নৌ- ডাকাতির চরম উপদ্রুপ থেকে রক্ষার জন্য বাকেরগঞ্জ থেকে ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭২ সালে মাদারীপুরের অধীনে গোপালগঞ্জ নামে থানা গঠিত হয়। ১৮৭৩ সালে বাকেরগঞ্জ জেলা ফরিদপুর জেলার সাথে যুক্ত হয়। ১৯০৯ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে ভেঙে গোপালগঞ্জ মহকুমা সৃষ্টি করা হয়। গোপালগঞ্জ, কোটালিপাড়া,ফরিদপুর মহকুমার মুকসুদপুর থানা গোপালগঞ্জের সাথে যুক্ত করা হয়। ১৯৩৬ সালে মুকসুদপুর থানার অংশ থেকে কাশিয়ানী থানা এবং ১৯৭৪ সালে গোপালগঞ্জ সদর থানা ভেঙে টুঙ্গিপাড়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে টুঙ্গিপাড়া থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ মুহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।
কলকতার জালবাজার নিবাসী প্রীতিরাম দাস ১৮০০ খ্রিঃ গোপালগঞ্জ জেলার জমিদারী ক্রয় করেন। তাঁর দ্ধিতীয় পুত্র মানিকপুর এস্টেটের রাজচন্দ্র দাস জমিদার ১৮০৪ খ্রিঃ মাহিষ্য বংশীয় মেয়ে রাসমনিকে বিয়ে করেন। ৪৯ বৎসর বয়সে রাজচন্দ্র তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে মারা যান। কোন পুত্র সন্তান না থাকায় পরবর্তীতে তাদের বড় কন্যার ছেলে গণেশ এ অঞ্চলের জমিদার হন। খাটরা এষ্টেটের প্রজারা রানীর নামে শ্রদ্ধা জানাতে খাটরা এস্টেটের রাজাগঞ্জ বাজারের নামবদল করে রানীর নাতি গণেশের একমাত্র পুত্র নব গোপালের নামানুসারে নবগোপালের নামের 'গোপাল' ও রাজাগঞ্জের 'গঞ্জ' এই মিলিয়ে গোপালগঞ্জের নামকরণ করা হয় বলে লোক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। টুঙ্গিপাড়ার নাম সম্পর্কে রয়েছে কিংবদন্তি। পবিত্র ইসলাম ধর্মের বাণী নিয়ে কতিপয় মুসলিম সাধক ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য টুঙ্গিপাড়ায় আসেন। তাঁরা সমতল ভূমিতে বাংলার ঐতিহ্যবাহী টং (টংঘর) তৈরি করে ধর্মীয় বাণী প্রচার সহ বসবাস করেন। এই টং থেকেই বিবর্তিত হয়ে মামকরণ হয়েছে টুঙ্গিপাড়া। ১২৭.২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট উপজেলার নামের অভিনবত্বের রয়েছে গৌরবদীপ্ত ইতিহাস।
ইতিহাসের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় ১৪৬২ খ্রিঃ হযরত বায়োজিদ বোস্তামী (রঃ) সঙ্গে দরবেশ শেখ আউয়াল বঙ্গীয় এলাকায় এসে টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্হাপন করেছিলেন। এই দরবেশ শেখ আউয়ালই হচ্ছেন শেখ হাসিনার পুর্ব পুরুষ। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে অপরূপ সুন্দর, পাখী ডাকা,সবুজ শ্যামল ছায়া সুনিবিড় এই টুঙ্গিপাড়া গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি জাতির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমানের জেষ্ঠ কন্যা বর্তমান বিশ্ব শান্তির রোল মডেল জননেত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা দরবেশ শেখ আউয়াল (রঃ) এর অষ্টম বংশধর। দরবেশ শেখ আউয়াল ছেলের নাম ছিল শেখ জহির উদ্দিন। তাঁর ছেলের নাম জান মাহমুদ ওরফে তেকড়ী শেখ। শেখ ইকরামের দুই ছেলে শেখ জামির হোসেন ও শেখ ওয়াসিম উদ্দিন। শেখ জামির হোসেনের তিন ছেলে শেখ আব্দুল মজিদ, শেখ আব্দুর রশিদ ও শেখ আব্দুল হামিদ। তাঁর ছিল তিন ছেলে শেখ ইকরাম,শেখ তাজ মোহাম্মদ ও কুদরত উল্লাহ কদু শেখ। শেখ ইকরামের দুই ছেলে শেখ জামির হোসেন ও শেখ ওয়াসিম উদ্দিন। শেখ জামিন হোসেনের তিন ছেলে শেখ আব্দুল মজিদ, শেখ আব্দুর রশিদ ও শেখ আব্দুল হামিদ। শেখ আব্দুল হামিদের তিন ছেলে শেখ লুৎফর রহমান,শেখ মতিউর রহমান এবং শেখ হাবিবুর রহমান। শেখ লুৎফর রহমানের দুই ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান (বাঙালি জাতির জনক) এবং শেখ আবু নাসের। শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ সন্তান - শেখ হাসিনা, শেখ কামাল,শেখ জামান,শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। পঁচাত্তরের পনের আগষ্ট কালো রাতে বিদেশে অবস্থান করায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান জাতির জনকের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল,শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সহ অনেককে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
প্রখম নাতনি জন্মের পর দাদা শেখ লুৎফর রহমান আনন্দের আতিশয্যে বাড়ীর সবাইকে ডেকে বলেছিলেন ' আমার নাতিন কেবল দেখতেই সুন্দর হবে না,মানের দিক থেকেও সে হবে সমান সুন্দর'। তার নাম রাখা হয় শেখ হাসিনা। 'হাসিনা'( শব্দের অর্থ স্বাধ্বী। যিনি সুন্দরের প্রতীক,সুন্দর মন ও সৎ চরিত্রের অধিকারী,যিনি সত্যের সাহসী যোদ্ধা,ন্যায় - বিচারে অটল এবং কল্যাণ ও মঙ্গলময়ী, কাজে অগ্রগামী। যিনি সুন্দর ও সফল নেতৃত্বদানে সক্ষম এবং ভালো কাজে জনগণকে উদ্দীপ্ত করতে পারঙ্গম। যিনি মহৎ হূ্ুদয়,দরদীও সংস্কৃতিবান মানসিকতার অধিকারী। 'হাসিনা' শব্দের অর্থের এই ব্যাপকতা এবং পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের পদবি ও তাঁর রাজনৈতিক ঐতিহ্য তাঁকে কর্তব্য ও করঙীয় নির্ধারণে উদ্ধুদ্ধ এবং আপোষহীন করেছে। দায়িত্ব পালনে নিজেকে জনগণের নেত্রী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
শেখ হাসিনার শৈশব কেটেছে জন্মভূমি টুঙ্গিপাড়ায়। এ প্রসঙ্গে 'ওরা টোকাই কেন' গ্রন্হে শেখ হাসিনা অতি সরল কিন্তু হৃদয়স্পর্শী সাবলীল বর্ণনাটি এমন " আমার শৈশব স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলো কেটেছে গ্রাম বাংলার নরম পলি মাটিতে,বর্ষার কাদা-পানিতে,শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে,ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে,জোনাক-জ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝিঁর ডাক শুনে,তাল-তমালের ঝোপে বৈচি,দিঘীর শাপলা আর শিউলি-বকুল কুড়িয়ে মালাগেঁথে,ধুলোমাটি মেখে বর্ষায় ভিজে খেলা করে"।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য তনয়া আমাদের প্রানপ্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাহসী ও গতিশীল নেতৃত্বের কারনে বাংলাদেশের মানুষ আজ সারাবিশ্বের বুকে এক অনন্য উচ্চতায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
আজ তাঁর জন্মদিন। কৃতজ্ঞ চিত্তে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।
মহান আল্লাহর কাছে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।