মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৯ ১৪৩২   ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৯৭

সূর্যের তেজ কমিয়ে দেবেন বিল গেটস!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০১৯  

‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ নামক অসুখে ভোগা, জরাজীর্ণ পৃথিবীর গায়ের তাপমাত্রা কমাতে এ বার নেমে পড়লেন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম (এই মুহূর্তে) ব্যক্তি বিল গেটস। বিল গেটসের টাকায় পৃথিবীর তাপমাত্রা কমাবেন বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা।

পৃথিবীতে এসে পড়া অতিরিক্ত সূর্য রশ্মিকে, বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে আবার মহাকাশেই ফিরিয়ে দিয়ে, আমাদের পৃথিবীকে বিশ্ব উষ্ণায়নের গ্রাস থেকে রক্ষা করবেন এই সব প্রথিতযশা বিজ্ঞানীরা। তাই শুরু হয়ে গেছে প্রজেক্ট SCoPEx।

গত ১০০ বৎসরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ০.৫ সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এ ভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বাড়বে ১.৫-২.০ সেন্টিগ্রেড। এবং ২১০০ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ১.৮ সেন্টিগ্রেড থেকে ৬.৩ সেন্টিগ্রেডের মতো বৃদ্ধি পেতে পারে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধির এই প্রবণতাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)।

গ্রীন হাউস প্রভাব , ওজোন স্তরের ক্ষয়ের কারণে পৃথিবীতে অতিরিক্ত সূর্য রশ্মির প্রবেশ , অরণ্যচ্ছেদন প্রভৃতি কারণে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

বহুদিন ধরে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, আন্তর্জাতিক সেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকার। কিন্তু দ্রুত কার্যকর করা যাবে এমন কোনও পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে কৃত্রিম উপায়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাবার জন্য কয়েকবছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন আমেরিকার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। এই মহৎ গবেষণায়, বিজ্ঞানীদের পাশে ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন ৬৩ বছর বয়সী ধনকুবের বিল গেটস। সেবামূলক কাজে দানের অঙ্কে, যিনি ইতিমধ্যেই ইতিহাসের পাতায় উঠে এসেছেন।

বিল গেটসের অর্থানুকূল্যে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা শুরু করেছিলেন Stratospheric Controlled Perturbation Experiment নামে একটি ঐতিহাসিক প্রজেক্ট। সংক্ষেপে যাকেবলা হচ্ছে SCoPEx।

এই প্রজেক্টের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মহাকাশে পাঠাবেন একটি বিশেষ বেলুন। বেলুনটিতে লাগানো থাকবে বিশেষ কিছু যন্ত্র। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার ওপরে থাকা বায়ুমণ্ডলে বেলুনটি ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের (calcium carbonate) গুঁড়ো স্প্রে করবে।


 
বিজ্ঞানীরা ঠিক করেছেন, প্রথম বেলুনের সাহায্যে করে ২ কিলোগ্রাম ওজনের ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের গুঁড়ো বিশেষ পদ্ধতিতে স্প্রে করা হবে পৃথিবীর ওপরে থাকা বায়ুমন্ডলীয় স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে। ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের গুঁড়ো স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বেশ কিছুটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে গিয়ে তৈরি করবে একটা সানশেড।

যে সানশেডে বাধা পেয়ে বেশ কিছু পরিমাণ সূর্য রশ্মি আবার মহাকাশে ফিরে যাবে। পৃথিবীর আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য যেটুকু সূর্য রশ্মি প্রবেশের প্রয়োজন ততটুকুই প্রবেশ করবে পৃথিবীতে। এর ফলে বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে পৃথিবী ও জীবজগৎ।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম SCoPEx পরীক্ষার খরচ হবে তিন মিলিয়ন ডলার।বিজ্ঞানীরা ১০০% নিশ্চিত পরীক্ষাটি সফল হবে। এবং একবার সফল হলে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের পৃথিবীর জুড়েই এরকমই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মনে হতে পারে কোনও সায়েন্স ফিকশনের প্লট শুনছেন। কিন্তু না এটা সত্যিই ঘটতে যাচ্ছে। কিছু দিন আগেই sky-clouding শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইচ্ছা করেই কয়েক সপ্তাহের জন্য বেলুনটির উড়ান পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।আবার কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে উৎক্ষেপণের সময় ও তারিখ জানাবে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।

প্রযুক্তিটি নিয়ে কিছু মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা আশঙ্কা করেছেন এতে ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি হবে। এই পদ্ধতির বহুল ব্যবহারে পৃথিবীর ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতিও হতে পারে। অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে আমাদের শরীরে ক্যানসার হতে পারে। যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন। এছাড়াও বন্যা, খরা ও সামুদ্রিক ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

হার্ভাডের ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী দলের ডিরেক্টর লিজি বার্নস বলেছেন, সত্যিই আমাদের আইডিয়া অনেকের মনে আশঙ্কা জাগাতে পারে। কিন্তু আমরা যা করব, পৃথিবীর ভালোর জন্যই করব।

সত্যিই কী SCoPEx প্রজেক্ট, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও আবহাওয়ার লাগামছাড়া পরিবর্তনের সঠিক সমাধান? এখনও অবধি বিশ্ব এ ব্যাপারে নিশ্চিতও নয় এবং নিশ্চিন্তও নয়। তবে আশার আলো বলতে এই প্রজেক্টে জড়িয়ে থাকা দুটি নাম। যাদের ওপর চোখ বুজে ভরসা করা যায়। একটি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও অন্যটি অবশ্যই বিল গেটস।

এই বিভাগের আরো খবর