বৃহস্পতিবার   ৩০ জানুয়ারি ২০২৫   মাঘ ১৬ ১৪৩১   ৩০ রজব ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৮০১

সুদমুক্ত ঋণে অসহায়দের ভাগ্যবদল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৮  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কালিকাপুর বাসিন্দা তাসলিমা খাতুনের (৩৮) সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী, কিছুতেই মিটছিল না। তার সংসারে যখন ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়’ দশা, তখন যেন আলোকবর্তিকা হয়ে এলো বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প। এই দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় ২০০৫ সালে তাসলিমা ৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। আরও ৫ হাজার টাকা যোগাড় করে এর সঙ্গে মিলিয়ে কিছু ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালতে থাকেন। পরের বছর আরও ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে। এরপর ছাগল বিক্রি করে ওই টাকার সঙ্গে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে নেওয়া ১০ হাজার টাকা মিলিয়ে গরুর বাছুর কেনেন তাসলিমা।

ব্যস, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাসলিমাকে। এখন তার বাড়িতে দু’টি গাভীসহ মোট চারটি গরু। দুই গাভী দৈনিক ১০ কেজি দুধ দেয়। প্রতিদিন তা বিক্রি করে তিনি ৭০০ টাকা আয় করেন। তাসলিমার এখন সব মিলিয়ে মূলধন প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। সংসারে অভাব বলতে কিছুই নেই। তার স্বামী আনারুল হক করেন কৃষিকাজ। তাদের একমাত্র ছেলে হৃদয় হোসেন এখন এইচএসসিতে পড়াশোনা করেন, মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মা-বাবাকে।

কথা হচ্ছিল ভাগ্যবদল হওয়া তাসলিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরার ট্যাকা দিয়ে ছোট একটা ডেহা (গরুর বাছুর) কিনছিলাম। আল্লাহ দিলে এখন দুইটা ডেহাসহ চারটা গরু। দৈনিক ৭০০ ট্যাকার দুধ বিক্রি করি। সংসারে কুনু অভাব নাই। আল্লাহ দিলে খুব ভালো আছি।’

দিনবদলের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রতি। বলেন,  ‘বসুন্ধরার ট্যাকা দিয়া গরু কিনছিলাম। বেইচ্চা লাভবান হইচি। সেই ট্যাকা দিয়া জমি কট (বন্ধক) রাখছি। ধান কইরা খাইতাছি, আল্লাহ দিলে এখন সংসারে ঝামেলা হয় না।’

কেবল তাসলিমা নন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ভাগ্যের চাকা বদলে গেছে বাঞ্ছারামপুরের খুশকান্দির পেয়ারা বেগমের। ২০০৫ সালে প্রথমে ৫ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। এরপর নেন সাড়ে ৭ হাজার টাকা ঋণ। এই টাকা খাটাতে খাটাতেই আরও দুই কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন পেয়ারা। সব টাকা তিনি কৃষি কাজে ব্যবহার করেছেন। এখন স্বাবলম্বী পেয়ারা বেগম।

তাসলিমা-পেয়ারাদের মতো বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ১৭ হাজার ৯৭ জন হতদরিদ্র মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ২০০৫ সাল থেকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৭৭টি গ্রামে ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি গ্রামের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত লোকদের কাছে এই সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন।

 ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, এই ফাউন্ডেশন উপকারভোগী দরিদ্র ও হতদরিদ্র লোকদের কাছ থেকে কোনো আমানত বা সঞ্চয় গ্রহণ করে না। ঋণ দেওয়ার তারিখ থেকে তিন মাস পর্যন্ত উপকারভোগীদের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায় হয় না। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের বর্তমানে প্রকৃত মূলধন ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, যা ঘূর্ণায়মানভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) বাঞ্ছারামপুরের দুর্গারামপুরে পল্লী ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় ৪৯তম সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ করে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। এসময় ৪২৩ জনের মাঝে ৪০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। 

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (বাঞ্ছারামপুর শাখা) খোকন চন্দ্র কর্মকার, বসুন্ধরা সিটি মহাব্যবস্থাপক মো. মাইমুন কবির, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন পল্লী ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের ইনচার্জ (বাঞ্ছারামপুর) মো. মোশারফ হোসেন।বাঞ্ছারামপুরের দুর্গারামপুরে ৪২৩ জনের মাঝে সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ করে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। ছবি: শাকিল আহমেদঅনুষ্ঠানে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (বাঞ্ছারামপুর শাখা) খোকন চন্দ্র কর্মকার বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের মহৎ একটা উদ্যোগ। বলা হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ, আবার কোনো সুদ ও সার্ভিস চার্জও নেওয়া হচ্ছে না। ঋণ পেতে হলে কোনো আমানত লাগছে না। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তির টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে না। বাঞ্ছারামপুরের অলিতে-গলিতে দরিদ্র মানুষকে ঋণ দিচ্ছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। ফলে এই উপজেলা থেকে দারিদ্র্য নির্মূল হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু বাঞ্ছারামপুরে নয়, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের মতো দেশে আরও অনেকে আছেন, দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করতে পারেন। তাই আমার আহ্বান আসুন বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধারের মতো দেশের দারিদ্র্যের শেকড় উপড়ে ফেলতে সারাদেশে এগিয়ে আসি।

বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা (ট্রেজারার) ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, কেবল বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নিজ উদ্যোগেই পল্লী ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তার স্বপ্ন, বাঞ্ছারামপুরের মাটি থেকে যেন চিরদিনের জন্য দারিদ্র্য বিমোচন হয়। আপনারা ক্ষুদ্র ঋণের সদ্ব্যবহার করবেন। এই ঋণে কিছুতেই যেন সুদের কালিমা লেপণ না হয়। কেউ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের টাকা নিয়ে সুদের কারবার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারা এই ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি অথবা যে কোনো আয়বর্ধক কাজ করবেন। সন্তানদের লেখাপড়া করাবেন। মাদককে না বলবেন। একটি সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ ও দেশ গড়তেই বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের এ প্রয়াস।’