রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৭ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৩৯

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির: কুমারী পূজায় মুসলিম কন্যা

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০১৯  

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতে চার বছরের এক মুসলিম কন্যাকে দুর্গা রূপে পূজিত করা হল মহাঅষ্টমীর কুমারী পূজায়। ঘটনা কলকাতার কাছেই বাগুইআটির অর্জুনপুরের দত্ত পরিবারে।

গত ২০১৩ সাল থেকে নিজের বাড়িতে পূজা করে আসছেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তমাল দত্ত। আর প্রতিবারই কোন না কোন নতুনত্ব থাকে তার পুজোয়। বিভিন্ন জাতি, ধর্মের কন্যাকে কুমারী পুজোয় অংশগ্রহণ করানো হয়। এবারও নতুন নজির তৈরির লক্ষ্যে অষ্টমীর পূজায় কুমারী পূজার অংশ হিসাবে মুসলিম কন্যাকে দেবী দুর্গা হিসাবে পুজো করল তমাল-মৌসুমীর পরিবার।

এ প্রসঙ্গে তমাল জানান, মা দুর্গার কোন জাত, ধর্ম নেই। আমরা শিশু কন্যাকে মা হিসাবে পূজা করেছি এবং মায়ের কোন ধর্ম হয় না। হিন্দুত্ব একটা স্বাধীন ধর্ম এবং আমাদের গোঁড়ামি অবলম্বন করা উচিত নয়।
কুমারী পুজোয় ‘মুসলিম কন্যা’কে পূজিত করার বিষয়টি কামারহাটির বাসিন্দা মহম্মদ ইব্রাহিম নামে তারই এক সহকর্মীকে জানান তমাল দত্ত। এসময় ইব্রাহিম-ই নিজের চার বছর বয়সী ভাগ্নি ফাতিমার কথা জানান তমালকে। তমাল তাতে সম্মতি জানানোয় বিষয়টি নিয়ে এগোতে থাকেন ইব্রাহিম। প্রথমে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তার বড় ভাই ইমরানের সাথে, পরে যোগাযোগ করা হয় আগ্রার ফতেপুর সিক্রিতে অবস্থিত বোন বুশরা বিবি (ফাতিমার মা), মহম্মদ তাহির (ফাতিমার বাবা) সাথে। এ ব্যাপারে ফাতিমার পরিবারের কোন আপত্তি না থাকায় তমাল দত্তের ইচ্ছাপূরণে সমস্ত বাধাই দূর হয়ে যায়। পরে মেয়ের একটি ছবি তমাল দত্তকে পাঠিয়ে দেন বুশরা বিবি। এরপরই যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু হয়।

ইব্রাহিম জানান, স্যার (তমাল)-এর সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। তাই তিনি যখন বললেন যে আমার ভাগ্নিকে পূজা করতে পারেন কি না-আমি তখন খুবই খুশি হয়েছিলাম।

অবশেষে রবিবার বাগুইআটিতে দত্ত পরিবারের বাড়িতে রীতিমতো শাস্ত্রীয় মতে ধুমধাম করে অষ্টমীর পুজো হয়। পরিবারের আত্মীয়, কাছের মানুষরা ছাড়াও প্রতিবেশিরা তো ছিলেনই, উপস্থিত ছিল গণমাধ্যমের কর্মীরাও। আমন্ত্রণ পেয়ে পূজায় হাজির ছিলেন ফাতিমার মা-বাবা-মামার পরিবারের লোকেরাও। বুশরা জানান, 'আমার খুবই ভাল লাগছে।'

শাস্ত্রমতে ষোল বছরের নিচে কোন অরজ:স্বলা কুমারী মেয়েকে পূজা করা হয়ে থাকে। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজার করা বিধান রয়েছে। কিন্তু ১২১ বছর আগে ১৮৯৮ সালে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে প্রথম কোন মুসলিম কন্যাকে দুর্গা রূপে পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।