শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ২ ১৪৩১   ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৪৫

সাবেক চেয়ারম্যানের অনিয়মে ডুবতে বসেছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৪  

গত ৪ বছরে ৪৮২ কোটি লোকসান সাবেক চেয়ারম্যানের অনিয়মে ডুবতে বসেছে  ফার্স্ট ফাইন্যান্স 


ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিডেট। আর্থিক খাতের এ প্রতিষ্ঠানটির ছিল দেশজুড়ে সুনাম। কিন্তু বতমানে নানা অনিয়ম ও খেলাপি ঋণে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির দুদর্শার নেপথ্যে রয়েছে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের সাবেক চেয়ারম্যান খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসান। সাবেক এ চেয়ারম্যানের নানা অনিয়মের কারণে ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটিতে দু'দফা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালিন প্রায় ৪৮২ কোটি লোকসান দিয়েছে  প্রতিষ্ঠানটি ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ঘনিষ্ঠ নুরুদ্দিন অপু ফাস্ট ফাইন্যান্সের মালিকপক্ষ। নুরুদ্দিন অপু তারেক রহমানে একান্ত সচিব ছিলেন। নুরুদ্দিন অপুর আইনজীবি হলেন ফার্স্ট ফাইন্যান্সের সাবেক চেয়ারম্যান খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসান । বর্তমানে  বিএনপি নেতা নুরুদ্দিন অপু  সহিংসতা মামলায় জেলে রয়েছে। 
২০২০ সালে নানা অনিয়মের মাধ্যমে নুরুদ্দিন অপুর এই আইনজীবিকে ফাস্ট ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসানে ফেলা খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসান আবারো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হতে চান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

অভিযোগ উঠেছে, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাসুদ হোসাইন খানকে সরিয়ে খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসানকে আবারো চেয়ারম্যান বানানাতে চলতি বছরের গত ৪ এপ্রিল তাকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনাপত্তি অনুমোদনের চিঠি দিয়েছে। খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসানকে প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক বানাতে পায়তাঁরা করছে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের তার বিশ্বাস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা। একারণে প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমে অসাধু পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে। 

প্রাপ্ত সূত্র মতে জানা যায়, খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসান ফার্স্ট ফাইন্যান্সের যোগদান করেন ২০১৮ সালের এপ্রিলে। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০২০ সালে। চলতি বছরের গত এপ্রিল মাসে দুই মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব শেষ করেন।  তিনি ২০২০ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর  থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ৪ বছরে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লোকসান হয় ৪৮১.৯৭ কোটি টাকা। ফাস্ট ফাইন্যান্সের আর্থিক লাভ-ক্ষতির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসান  ফার্স্ট ফাইন্যান্সের  চেয়ারম্যান থাকাকালিন ২০২০ সালের লোকসান হয় ৫০.১৩ কোটি টাকা, ২০২১ সালে লোকসান হয় ২১৯.০১ কোটি টাকা, ২০২২ সালে লোকসান হয় ১৭২.০৭ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে লোকসান হয় ৪০.৭৫ কোটি টাকা। যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি আজ  ডুবতে বসেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সার্কুলার দেখা যায়, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, ‘স্বতন্ত্র পরিচালক’ বলতে ‘এইরূপ ব্যক্তিকে বোঝাবে, যিনি ফাইন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ও শেয়ারধারক হইতে স্বাধীন এবং যিনি কেবল ফাইন্যান্স কোম্পানির স্বার্থে নিজের মতামত দেবেন। ফাইন্যান্স কোম্পানির সহিত কিংবা ফাইন্যান্স কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সহিত যাহার অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যত কোনো স্বার্থের বিষয় জড়িত নেই।’


গত ৪ বছরের প্রায় ৪৮২ কোটি লোকসানের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক চেয়ারম্যান খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসান ফাস্ট ফাইন্যান্স অফিসে ডাকেন এ প্রতিবেদককে। 

ফাস্ট ফাইন্যান্সের মালিকপক্ষের আইনজীবি হয়ে কিভাবে চেয়ারম্যান হলেন জানতে চাইলে তিনি দৈনিক বলেন, এগুলো লোকের মুখের কথা। বিষয়টি অস্বীকার করলে তাকে জানানো হয় আমাদের কাছে ডমুমেন্ট রয়েছে বলতেই তিনি চুপ মেরে  যায় যান। পরে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়ার কথা থাকলে তাকে  আর পাওয়া যায়নি।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উর্ধ্বত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,  ফাস্ট ফাইন্যান্সের এ দুদর্শার নেপথ্যে রয়েছে খান মোহাম্মাদ মইনুল হাসানের নানা অনিয়ম। এতো কিছুর পরও আবারো ফাস্ট ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যানের গদিতে বসতে চান তিনি। প্রতিষ্ঠানটিকে আবার লোকসানে ফেলতে অনেকজন পরিচালককে ম্যানেজ করে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

উল্লেখ্য ,প্রতিষ্ঠানটির নানা দুদর্শার  কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। 

এই বিভাগের আরো খবর