বুধবার   ৩০ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ১৫ ১৪৩১   ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৪০

লালমনিরহাটে একই আঙ্গিনায় মসজিদ-মন্দির

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২১  

লালমনিরহাটে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন একই আঙ্গিনায় মন্দির ও মসজিদ। একই উঠান থেকে শোনা যায় উলুধ্বনি ও সুমধুর আযানের আওয়াজ। এক পাশে ধূপকাঠি, অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এভাবেই ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথক দু’টি ধর্মীয় উপাসনালয়। যে যার মতো ধর্ম পালন করে চলেছেন। এখন চলছে শারদীয় দুর্গোৎসব।

লালমনিরহাট শহরের পুরান বাজারের কাছেই এক আঙিনায় অবস্থিত মসজিদ ও মন্দির। এখানে মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ এবং কালীবাড়ি দুর্গা মন্দির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। দুটি স্থাপনার দেয়াল প্রায় লাগোয়া। এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভাবতেই ভালো লাগা কাজ করে।

ভোরে ফজরের সময় মোয়াজ্জিনের কণ্ঠে মিষ্টি আজান শেষে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে চলে যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই মন্দিরে শোনা যায় উলুধ্বনি! চলে পূজা-অর্চনার অনুষ্ঠানিকতা। এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন বহন করছে শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির।

মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে একই উঠানে দুইটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে মুসলমান এবং হিন্দুরা যে যার ধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালন করছেন। আমরা নামাজ পড়ছি, তারা পূজা করছেন। কেউ কারো ধর্মে কোনো হস্তক্ষেপ করছেন না। আমাদের মাঝে ধর্মীয় আচার-বিধি পালন করা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্বও নেই।’

লালমনিরহাট জেলার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘১৮৩৬ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে পুরান বাজার অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে পরিচিত। এরপর মন্দির প্রাঙ্গণে ১৯০০ সালে একটি নামাজের ঘর নির্মিত হয়। নামাজের ঘরটিই পরবর্তীতে পুরান বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো বিবাদ ও ঝামেলা ছাড়াই ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। দুর্গাপূজার সময় ঢাক-ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সমস্যা হয় না। মসজিদ ও মন্দির কমিটির সদস্যরা বসে ঠিক করে নেন কখন কিভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হবে। নামাজের সময় সব বাদ্য-বাজনা বন্ধ রাখা হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করে পূজারীদের সুযোগ করে দেন। এটাই এখানে নিয়ম।’

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে মসজিদ-মন্দিরের উঠান একটি হলেও উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব-স্ব ধর্ম পালন করে আসছেন। কিন্তু ধর্ম পালন নিয়ে কখনো কোনো বাক-বিতণ্ডাও হয়নি বলে জানা যায়। শালীনতা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষ।

ধর্মীয় সম্প্রীতি কী, ধর্মীয় সম্প্রীতি কাকে বলে, তা কেমন হওয়া উচিত- তা জানার জন্য, দেখার জন্য সবার এখানে আসা উচিত। মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘মন্দিরে নিয়মিত পূজার্চনা হয়। আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির বিঘ্ন ঘটে- এমন অবস্থার মধ্যে আমাকে কোনো দিনই পড়তে হয়নি। বরং স্থানীয় মুসল্লিদের সহযোগিতা পেয়ে আসছি।’

স্থানীয় বাসিন্দারা এটা নিয়ে গর্ব করেন। পৃথিবীজুড়ে চলমান সহিংসতা আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সংবাদের মধ্যে এমন দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। একই আঙিনায় মন্দির ও মসজিদ স্থাপন সৃষ্টটি করেছে ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরল এক দৃষ্টান্ত।

এই বিভাগের আরো খবর