বৃহস্পতিবার   ৩১ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ১৬ ১৪৩১   ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪২৩

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন, গর্ভের সন্তান নষ্ট

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২১  

সিলেটের সীমান্ত এলাকার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাড়ুয়া মাঝপাড়া গ্রামের বাসিন্দাহাবিবা আক্তার ইতি ২৫ বছরের যুবতী  তিনি,২০১৯ সালের ৩ জুলাই সিলেট নগরীর বাদাম বাগিছার মৃত সামছুল হকের ছেলে রিদওয়ানুল হকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হাবিবা।

বিয়ের সময় ইতির বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন উপহার হিসেবে দুই লক্ষ টাকার মালামাল দেন আদরের মেয়ের সাথে।মেয়ে খুব সুখী হবে এমনটিই ছিল তাদের ধারণা। কিন্তু না বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের আসল রূপ দেখতে পান তিনি।
 
ইতির স্বামী ইতিকে চাপ দেন বাবার বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য। স্বামীর আবদার আর মন রক্ষায় পূবালী ব্যাংক কোম্পানীগঞ্জ শাখা থেকে নিজ নামীয় একাউন্ট থেকে নিজের শেষ সম্বল পাঁচ লাখ টাকা উত্তোলন করে তুলে দেন স্বামীর হাতে। টাকা দেওয়ার পর সুখে শান্তিতে কয়েক মাস অতিবাহিত হয় ইতির। কিন্তু সে সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয় না।
 
গত ৭ আগস্ট ইতির স্বামী পরিবারের সদস্যদের কুপরামর্শে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য তার কাছে আরো ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। ইতি তার বাবার বাড়িতে টাকা নেই জানালে শুরু হয় তার উপর নির্মম নির্যাতন। স্বামী, শাশুড়ি, ঝা এবং ননদ মিলে তার উপর চালান মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।
 
গত ৭ আগস্ট শ্বশুর বাড়িতে স্বামী ও ওই তিন জনের মারপিট সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে কান্না করেন ইতি। তখন তার মুখে কাপড় দিয়ে চেপে ধরে একের পর এক আঘাত করেন স্বামী, শাশুড়ি, ঝা ও ননদ। একপর্যায়ে তার স্বামী ৯ সপ্তাহ ৩ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ইতির পেটে আঘাত করলে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। এসময় নিরূপায় ইতি তার মাকে ফোন করেন।

এরই মধ্যে স্বামীর পরিবার ইতির স্বর্ণালঙ্কারসহ ব্যবহারের যাবতীয় জামা-কাপড় কব্জাবন্দি করে ফেলেন। ইতির মা বাড়ি থেকে এসে এক কাপড়ে ঘরের বারান্দা থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন শহরে। সিলেট ওয়েসিস হাসপাতালে প্রফেসর ডা. নাদিয়া বেগমের কাছে আসলে তিনি ইতির আল্ট্রাসনোগ্রাফ করান। শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে ঔষধপত্র লিখে দেন তিনি। অবস্থার অবনতি ঘটলে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শও দেন। 

ওষুধে সুস্থ হলে পরবর্তীতে আবারও তাকে দেখানোর কথা জানান এ ডাক্তার। ইতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে যেকোনো সময় গর্ভ নষ্ট হয়ে যেতে পারে মর্মে জানান তিনি। এমন নির্মম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ১৬ আগস্ট সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেছেন ইতি।
 
মামলায় আসামি করেছেন তার স্বামী মো. রিদওয়ানুল হক,শাশুড়ী সুলতানা চৌধুরী,ঝা আয়েশা বেগম,ননদ রাহেনা বেগমকে।
 
ইতির মা সালেহা বেগম অভিযোগ করেন, ‘আমার মেয়েকে তার স্বামী,শাশুড়ী,ঝা ও ননদ সবসময় নির্যাতন করে আসছে। প্রায়ই মেয়েটাকে টাকার জন্য ওরা মারধর করত। আমার মেয়ে মামলা করার পর তার স্বামী রিদওয়ানুল হক ও ঝা আয়েশা বেগম পর্তুগাল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমি অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
 
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর এসএমপি এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মুহাম্মদ মাঈনুল জাকির বলেন,স্ত্রী নির্যাতন ও যৌতুক দাবির ঘটনায় হাবিবা আক্তার ইতি নিজে বাদি হয়ে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত চলছে পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত আছে পুলিশের।

এই বিভাগের আরো খবর