শনিবার   ১৯ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১   ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩০৯

যে দ্বীপে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০১৯  

প্রাণীর প্রতি জাপানিদের আবেগের দৃষ্টান্ত জগদ্বিখ্যাত। টোকিওর বিখ্যাত র‌্যাবিট কাফে’র নাম তো অনেকেই শুনেছেন। পোষা হরিণ কিংবা জিগোকুদানির তুষার বানরের কাজকর্মে মুগ্ধ হয়ে যান যেকোনো পর্যটক। তবে পোষা প্রাণী বিড়ালের কাঁধে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করাতেও জাপানিদের জুড়ি নেই। যেমন, সে দেশে বিভিন্ন রাজপ্রাসাদের লর্ড হিসেবে বিড়ালদের নিযুক্ত করার কাহিনী রয়েছে ঢের। এমনকি পর্যটনকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে জাপানের ট্রেন স্টেশনগুলোতে স্টেশন ম্যানেজার হিসেবেও বিড়ালদের নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে।
তবে জাপানের সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল সম্ভবত তাদের বিখ্যাত নেকো-শিমাগুলো। নেকো-শিমা শব্দের বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘বিড়ালের দ্বীপ’। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন; সেসব দ্বীপে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে কেবল বিড়াল আর বিড়াল! জাপানের সবচেয়ে সুপরিচিত বিড়ালের দ্বীপ হলো ‘আওশিমা’। তবে এছাড়াও জাপানের উপকূলজুড়ে বেশ কয়েকটি বিড়ালের দ্বীপ রয়েছে। এমনকি কিছু নোনা পানির হ্রদের ভেতরে গড়ে ওঠা দ্বীপও ‘নেকো-শিমা’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। বিড়ালদের জন্য সুবিখ্যাত জাপানের দ্বিতীয় বৃহৎ দ্বীপটির নাম তাশিরো-জিমা। তবে ধীরে ধীরে বিড়ালের দ্বীপ বা নেকো-শিমাগুলো পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণে পরিণত হওয়ায় জাপানে নতুন নতুন বহু দ্বীপ বিড়ালের স্বর্গ হয়ে উঠছে।

জাপানে এই মুহূর্তে ১১ টি বিড়ালের দ্বীপ রয়েছে। এগুলো হলো: ওকিশিমা, সানাগিশিমা, আওশিমা, মুজুকিজিমা, মানাবেশিমা, আইওয়াইশিমা, আইজিমা, আইশিমা, জেনকাইশিমা, কাদারাশিমা, তাশিরো-জিমা। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে সব দ্বীপে মানুষের বিপরীতে বিড়ালের অনুপাত কত! এই সংখ্যাটা একেক নেকো-শিমায় একেক রকম। যেমন: আওশিমা দ্বীপে একজন মানুষের বিপরীতে ১০ টির বেশি বিড়াল বাস করে। দ্বীপটীতে মাত্র ১৩ জন মানুষের বাস হলেও সেখানে বিড়াল রয়েছে দেড় শতাধিক। অন্যদিকে, তাশিরো-জিমা দ্বীপে ১০০ জন মানুষের বিপরীতে ১০০ টি বিড়াল বাস করে। অর্থাৎ সেখানে মানুষ ও বিড়ালের অনুপাত ১:১। মানাবেশিমা দ্বীপেও ১:১ অনুপাতে ৩০০ মানুষের বিপরীতে বাস করে ৩০০টি বিড়াল।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এসব দ্বীপে কীভাবে এত বিড়ালের বসবাস শুরু হলো? একেক দ্বীপের ক্ষেত্রে কারণটা ভিন্ন ভিন্ন। যেমন-বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আওশিমা দ্বীপটি মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত ছিল। তখন জেলেদের নৌকায় ইঁদুরের উৎপাতে তারা অতিষ্ঠ হয়ে যেতেন। এর সমাধান হিসেবে তারা নৌকায় বিড়াল পুষতেন। ওই সময় থেকেই এই দ্বীপে আস্তে আস্তে বিড়ালের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে মাছ ধরা পেশা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল বিড়ালগুলো থেকে যায় এই দ্বীপেই। আবার তাশিরো-জিমা দ্বীপে বিড়ালের উৎপত্তির কাহিনি কিন্তু একই রকম। এই দ্বীপের আদিম বাসিন্দারা এখানে রেশম পোকার চাষ করতেন। রেশম পোকা সহজেই ইঁদুরদের আকর্ষণ করত, ফলে এই দ্বীপে একসময় ইঁদুরের উৎপাত সীমা ছাড়িয়ে যায়। তখন থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে বিড়াল পোষা শুরু করেন।
২০০৫ সালে ভয়ঙ্কর এক ভূমিকম্পের আঘাতে জেনকাইশিমা দ্বীপটি বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় সেখানে বিড়ালের সংখ্যা অনেক কমে যায়। তার আগে জেনকাইশিমাই জাপানের সবচেয়ে বড় নেকো-শিমা হিসেবে পরিচিত ছিল। জাপানের বিড়াল-দ্বীপগুলোতে ভ্রমণ করতে প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক সেই দেশে ভ্রমণ করতে যান। জাপানের পর্যটন শিল্পে এই নেকো-শিমাগুলো অনেক বড় অবদান রাখছে। জাপানের ট্যুরিজম বোর্ডও এসব দ্বীপে বিড়ালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ।

এই বিভাগের আরো খবর