সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৮ ১৪৩২   ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৮২

যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করলো বোরকা পরা দূর্বৃত্তরা 

​​​​​​​কুমিল্লা উত্তর জেলা

প্রকাশিত: ২ মে ২০২৩  

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে বোরকা পরিহিত তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে হত্যা করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এমন তথ্য মিলেছে। কিলিং মিশন সম্পন্ন করে তারা দ্রুত পায়ে হেটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

হত্যাকাণ্ডের পর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এক মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ, পিবিআই, র‌্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দুর্বৃত্তদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারে মাঠে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে কমান্ডো স্টাইলে যুবলীগ নেতা হত্যার ঘটনায় গৌরীপুর বাজারসহ স্থানীয় এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
 
জানা গেছে, রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজারে বোরকা পরা ৩ দুর্বৃত্ত যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা হেঁটে বোরকা পরে মসজিদ থেকে পূর্বদিকে জামাল হোসেনের ভাড়া বাসার দিকে যাচ্ছে। সিসি ক্যামেরার থাকা সময় অনুযায়ী, তখন সন্ধ্যা সাতটা ৪৪ মিনিট। এর এক মিনিট ২০ সেকেন্ডের মাথায় একই পথ ধরে ওই তিন দুর্বৃত্ত দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় একজনের মুখের আবরণ খুলে যায়। আরেকজনের হাত থেকে অস্ত্র পড়ে যায়। অস্ত্রটি কুড়িয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জামাল হোসেন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকার ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে এশার নামাজের জন্য মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। পশ্চিম দিক থেকে বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা আসে। একজন এসে প্রথমে দাড়িয়ে থাকা জামাল হোসেনকে ধাক্কা দেয়। এ সময় জামাল এক দুর্বৃত্তকে ঝাপটে ধরেন। তখন আরেক দুর্বৃত্ত এসে লাথি মেরে জামালকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর দুর্বৃত্তরা পর পর তিনটি গুলি করে পশ্চিম দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। গুলির শব্দ পেয়ে অনেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ জামাল হোসেনকে প্রথমে দাউদকান্দি (গৌরীপুর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর সেখানে রাত ১০টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত জামাল হোসেন ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তী তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক এবং তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিনি গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন এবং সেখানে থাই গ্লাসের ব্যবসা করতেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ, পিবিআই, র‌্যাব, ডিবি ও জেলা পুলিশের সদস্যরা বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। গৌরীপুর বাজারে পোশাকপরা ও সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ঘাতকরা তার পূর্ব পরিচিত হতে পারে। তাই হয়তো তারা জামাল হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত হয়েই বোরকা পরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। বোরকা পরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এখানে আর কখনো ঘটেনি। তারা পেশাদার খুনি হতে পারে। এ ছাড়া তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিদ্যমান দ্বন্দ্বের জেরে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডের খবর জানার পরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং ছায়াতদন্ত শুরু করি। নিহত জামাল হোসেনের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল ছাড়াও আশপাশে থাকা বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। এসব ফুটেজে হত্যায় অংশগ্রহণকারীদের দেখা গেছে। দুর্বৃত্তদের ঘটনাস্থলে যাওয়া ও কিলিং মিশন শেষে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য রয়েছে। আশা করি ঘাতকদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারে আমরা সচেষ্ট হব।

দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর ভুঞা জানান, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউকে সনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যায়নি। আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাগুলোও ঘাতকদের সনাক্তের চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ঢাকা থেকে বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সন্ত্রাসের জনপদখ্যাত এ গৌরীপুর বাজারে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজার ঘেঁষে যাওয়া নদীর ওপর ব্রিজ পার হলে তিতাসের জিয়ারকান্দি গ্রাম। জিয়ারকান্দির এবং গৌরীপুরের মধ্যে গৌরীপুর বাজারের নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এখানে জিয়ারকান্দির মনির হোসেন চেয়ারম্যান, শফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও নুরুজ্জামান চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

এই বিভাগের আরো খবর