শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ১৭ ১৪৩১   ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২০৮

ভারতফেরত যাত্রীদের ইমিগ্রেশনে অভ্যর্থনায় লাখ টাকার খাবার

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২১  

বহুকাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণ হতে চলেছে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভারতে আটকা পড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের। যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারতফেরত যাত্রীদের জন্য ইমিগ্রেশনে বিনা মূল্যে ফল, পানি ও শুকনা খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৭ জুন) থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশে ফেরা ক্লান্ত যাত্রীরা এমন আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে কবলে পড়ে কয়েক হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে আটকে পড়েছিলেন। কিছুদিন যাবৎ ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের ছাড়পত্র জটিলতাসহ নানা দুর্ভোগের কারণে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিল তাঁরা। এমনকি বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে যাওয়া অনেক পাসপোর্টধারী যাত্রীকে সে দেশে অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হয়েছে। অন্যের কাছে হাত পেতেও জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন অনেকে। তারপর নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করার পর নতুন দুর্ভোগের মুখে পড়েন তাঁরা। নিজ খরচে কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতা তাঁদেরকে নতুন বিপদে ফেলে।

অবশেষে যশোরের জেলা প্রশাসক ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সরকারি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকাদের জন্য ৬ টন চাল ও ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের ইমিগ্রেশনের মধ্যে পানি, শুকনো খাবার ও ফল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। তা ছাড়া সরকারি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের কাঁচা বাজারের জন্য ধার্যকৃত প্রতিদিনের মাথাপিছু খরচের পরিমাণ ১৭০ থেকে কমিয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছেন।

জেলা প্রশাসকের এমন মহৎ উদ্যোগের খবর সরকারি হোম কোয়ারেন্টিনে ছড়িয়ে পড়লে ও আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভেতরে যাত্রীদের অভ্যর্থনা সময় পানি, শুকনো খাবার, ফল পেয়ে যাত্রীরা উৎফুল্ল হয়েছেন। অনেক যাত্রীদের মুখে শোনা গেছে এখন থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে ১৪ দিন কেন, এক মাস থাকতেও তাদের আর আপত্তি নেই।

ভারত থেকে ফেরা পাসপোর্টযাত্রী ঊষারানী বলেন, শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার পরে বাংলাদেশে অনেক স্থানে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু খুব একটা ভালো ফল পাইনি। সর্বশেষে গরু বিক্রির টাকা ও জমি বন্ধক দিয়ে ভারতে তিন মাস ধরে চিকিৎসা নিয়েছি। লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারিনি। এমনকি বাংলাদেশে প্রবেশের সাথে সাথে নিজ খরচে হোটেলে ১৪ দিনে থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের কাছে কোন টাকা অবশিষ্ট নেই, যে নিজ খরচে বাংলাদেশে এসে হোটেল ভাড়া দিয়ে, তিন বেলা হোটেলে খেয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবো। এক পর্যায়ে ইমিগ্রেশন থেকে আমাদেরকে যশোর পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারে কোয়ারেন্টিনে পাঠান। সেখানে সরকারিভাবে থাকা ও খাবারের জন্য চাল দেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের মত মানুষের জন্য খুবই সহায়ক হয়েছে। তা না হলে আমরা ও আমাদের মত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে আসা পাসপোর্টযাত্রীরা হতাশায় আরো মারা যেত বলে তিনি জানান।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজি মোঃ সায়েমুজ্জামান বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের দুর্বিষহ জীবন যাপনের কথা জানার পরে জেলা প্রশাসক নিজের ফান্ড থেকে পিটিআই ও ঝিকরগাছা লাউজানি গাজীর দরগা কোয়ারেন্টিনে ৬ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। তাছাড়া ভারত থেকে দেশে প্রবেশের পর পরই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একলাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব টাকায় একজন যাত্রীর জন্য ৭০ টাকা মূল্যের এক প্যাকেট খাবার দেয়া হচ্ছে। প্যাকেটে থাকছে এক বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি, ফল ও শুকনো খাবার। সোমবার সারাদিন ভারত থেকে ফেরত আসা ৬৮ পাসপোর্টযাত্রীকে এসব বিশুদ্ধ পানি, ফল ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারি কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের প্রতিদিনের মাথাপিছু খরচের হারও কমানো হয়েছে। যেখানে সরকারি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা একজন পাসপোর্টযাত্রীর নিকট থেকে আগে নেয়া হতো ১৭০ টাকা। সেই হার কমিয়ে করা হয়েছে ১২০ টাকা। এতে যাত্রীদের অনেক অংশই দুর্ভোগ কমেছে। এখন থেকে ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে কোন আপত্তি নেই বলে তিনি জানান।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের দুর্বিষহ জীবনযাপনের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানার পর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের খাবারের জন্য ৬ টন চাল দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ভারত থেকে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টযাত্রীরা আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবারও প্রদান করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এই বিভাগের আরো খবর