বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৮৬৩

বরখাস্তকৃত অডিট কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীর প্রতারণা

আশরাফুল আলম সিদ্দিকী বিশেষ প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৩  

গত ৯ই মার্চ ২০২১ তারিখে সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জানা যায় মোঃ গোলাম রব্বানী অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (পশ্চিম), বাংলাদেশ রেলওয়ে, রাজশাহী এর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক জয়পুরহাট কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিকৃত মুরাল স্থাপন এবং কৌশলের আশ্রয় নিয়ে রেলের জায়গা হতে ৩ শতাধিক ব্যক্তির ভ্রাম্যমান ছোট ছোট দোকান উচ্ছেদ এবং প্রায়শই অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ২০১৮ এর ১২(১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
আবার, পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব) ক্যাডারের অতিরিক্ত উপ মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সাময়িক বরখাস্ত) জনাব মোঃ গোলাম রব্বানীকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) ২০১৮ এর বিধি ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী সরকারি "চাকুরী হইতে বরখাস্ত করন" সূচক "গুরুদন্ড" প্রদান করা হয়।
বরখাস্তকৃত অডিট ক্যাডার মোঃ গোলাম রব্বানীর এনআইডি নাম্বার:(১৯৬৭২৬২২১১৪৮০১৪৫৪), ক্যাডার পরিচিতি নাম্বার:(০০১-০০১-২৬৫) এবং এর সাথে তার বন্ধু ফেরদৌসের মাধ্যমে গত ৩ বছর আগে পরিচয় হয় আশরাফুল ইসলামের সাথে। পরবর্তীতে, এক পর্যায়ে উনি সরকারি দফতরের যে কোন কাজ করতে পারবেন বলে তাকে জানায়। যার দরুণ আশরাফুল তাকে তার পরিচিত জনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা ক্যাশ প্রদান করে। যদিও উনি রিটেনের আগেই দুই টা কাজের জন্য দশ লাখ টাকা চেয়েছিল।

রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাষ্টার পদের জন্য সার্কুলার ২০২১, দেওয়ার পর পরই আড়াই লাখ টাকা এবং লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সাভার এ অফিস সহকারী পদের জন্য রিটেনের আগে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয় ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে। রিটেন সহ কন্টাক্ট থাকায় রিটেনের পর সমস্ত টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। আর, টিকতে না পারলে জনাব গোলাম রব্বানী ৭ দিনের ভিতরে টাকা ফেরতের আশ্বাস দেয় ভুক্তভোগী আশরাফুল ইসলামকে। উক্ত টাকার প্রমাণ স্বরূপ‌ গোলাম রব্বানী তার নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট এর ট্রাষ্ট ব্যাংকের মিলেনিয়াম ব্রাঞ্চ এর ২ টি চেকের পাতা, যার নাম্বারঃ  A7249351 এবং  A724935 প্রদান করে।

চাকরি যেখানে সোনার হরিণ, সেখানে রিটেন পরীক্ষায় টিকানো নাকি‌ অডিট ক্যাডার গোলাম রব্বানীর কাছে কোন ব্যাপারই না। কিন্তু, দুঃখজনক ভাবে ২ জনের ১ জন ও রিটেনে টিকতে পারে নাই। ভুক্তভোগী তার কাছে প্রদত্ত টাকা ফেরত চাইলে সে বিভিন্ন ভাবে টালবাহানা শুরু করে, যার অডিও রেকর্ড  আশরাফুল ইসলামের কাছে সংরক্ষিত। কাজ না হওয়ায় গোলাম রব্বানীর কাছ থেকে প্রদত্ত টাকা ফেরত না পাওয়ায় লাভের উপরে টাকা নিয়ে‌ চাকরী প্রার্থীদের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয় ভুক্তভোগীরা। যার ফলশ্রুতিতে এখন তারা সুদের ঘানি টানতেছে। এই বিষয়ে গোলাম রব্বানী সাহেবের সামান্য প্রকার ভ্রুক্ষেপ বা অনুশোচনা নাই। বিসিএস ক্যাডার গণ বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে অত্যান্ত সম্মানজনক অবস্থানে বাস করে থাকে। কিন্তু, কিছু কিছু বিসিএস ক্যাডার গণ তাদের ব্যক্তিগত মর্যাদা ভুলে যায়, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

উপ সচিব গোলাম রব্বানী, ভুক্তভোগী আশরাফুল ইসলামকে সপ্তাহের শেষে এবং মাসের শেষ দিকে টাকা ফেরতের ডেট দেয় আবার পরের মাসে নিয়ে যায়। জুন ২০২২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত তার এহেন কর্মকাণ্ডে তার উপর এখন ভুক্তভোগীর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নাই বললেই চলে। সরকারি চাকরি যেখানে সোনার হরিণের চেয়েও দামী সেখানে তাদের মত ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষকে সহজেই প্রতারণার ফাদে ফেলতে পারে।

পরবর্তীতে ঢাকার সেগুনবাগিচায় অডিট ভবনে যোগাযোগ করলে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে, সিজিএ এর ব্যক্তিগত পিএ জনাব জিয়া সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আপনার কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকলে, আপনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন, এক্ষেত্রে অফিস বা আমাদের পক্ষ থেকে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী আশরাফুল ইসলাম বলেন, তারপর ও আমি মানবতার খাতিরে দীর্ঘদিন তার কাছে মোবাইলে এবং তার পরিচিত জনের মাধ্যমে ধরণা দিলেও সে শুধু সময় ক্ষেপণ করে এবং দেখা করতে চাইলেও গোলাম রব্বানী সাহেব নানা অজুহাতে এড়িয়ে চলতে থাকে এবং বারংবার ডেট প্রদান করে, এতে করে ভুক্তভোগী আশরাফুল ইসলাম নানা পেরেশানির মধ্যে দিনানিপাত করছে। যা গোলাম রব্বানী সাহেবকে জানালেও উনি এই সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই।

পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই আশরাফুল ইসলাম উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ সহ পল্টন মডেল থানায় গিয়ে চাকরির জন্য টাকা প্রদান করা হয়েছে এই বিষয় উল্লেখ না করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তার কাছে টাকা পাওয়া যায় এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার অভিযোগ নাম্বার - ৩০৬(০৫/০৪/২৩)। আবার, তদন্ত অফিসারের পরামর্শ ক্রমে মোঃ গোলাম রব্বানী সাহেবের সাথে আপোষ মীমাংসা করার জন্য বারংবার চেষ্টা করা হয়, তবুও উনি এই বিষয়ে কোন প্রকার গুরুত্ব আরোপ না করায় তার গ্রামের বাড়ীতে ধরঞ্জী, উপজেলা - পাঁচবিবি, জেলা - জয়পুরহাটে গিয়ে তার পিতার সাথে এবং তার তার ছোট ভাই শিক্ষক ফারুকের সাথে এই বিষয়গুলো জানানো হয় এবং স্থানীয় ভাবে অনেককেই এই বিষয়ে জানানো হয়, পরবর্তীতে গোলাম রব্বানী সাহেব ,তার বন্ধু ফেরদৌস ও  অন্যান্য সাক্ষীদের উপস্থিতিতে সংসদ ভবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গত ৩১ মে ২০২৩ তারিখে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত আকারে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, আগামী তিন মাসের মধ্যে গোলাম রব্বানী, আশরাফুল ইসলামের সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দিতে বাধ্য থাকিবে। অন্যথায় আশরাফুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু তারপরও গোলাম রব্বানী একেক সময় একেক কথা বলায় আশরাফুল ইসলাম এবং সাক্ষী ফারুক সাহেব তার গ্রামের বাড়ি পাঁচবিবি স্টেশন নিকটবর্তীতে আবারো যায় এবং গোলাম রব্বানী সাহেবের সাথে অনেক চেষ্টার পর দেখা করতে সক্ষম হয়, তার বন্ধু ও প্রধান সাক্ষী ফেরদৌসের মাধ্যমে কিন্তু গোলাম রব্বানী সাহেব জানায় তোমাদের কাছে ডকুমেন্টস আছে তোমরা আদালতে যাইয়া টাকা আদায় কর, আর‌ পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র, এম‌পি এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ দিয়ে যদি আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারো তাহলে তোমরা টাকা আদায় করে নিও। সে এক পর্যায়ে আশরাফুল, ফারুক, ও ফেরদৌস এর সামনে বলে জয়পুরহাট জেলার এসপি, ডিসি আমার পকেটে থাকে, পাঁচবিবি থানার ওসি আমার বাড়ির সামনে বইসা থাকে, আমারে গার্ড দেয়। আর, তোমরা আমার কি করতে পারবা, পারলে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিও। পরবর্তীতে সমঝোতায় ও অনুনয়-বিনয়ের ফলে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে টাকা পরিশোধের মৌখিকভাবে চুক্তি হয়। তার বন্ধু ফেরদৌস যার মাধ্যমে গোলাম রব্বানী সাহেবের সাথে পরিচয় সেই ফেরদৌস বলে গোলাম রব্বানীর টাকা দেওয়ার মত কোন মন মানসিকতা নাই, যদি থাকতো সে অনেক আগেই আপনার এই টাকাটা পরিশোধ করতে পারত। উনি কোন ক্ষমতা বলে এই ধরনের প্রতারণা করে আসছে তা বোধগম্য নয়।

আশরাফুল ইসলাম জানান , আমরা রব্বানী সাহেবের বাড়িতে গেলে দেখতে পারি সরকারি চাকরি না থাকা সত্ত্বেও উনি একটি মাইক্রো নোয়া গাড়িতে ( ঢাকা মেট্রো -চ: ১১-৩৫৮৬) অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগিয়ে চলাচল করছে এবং পাঁচবিবিতে হাইওয়ে রোডের পাশে হাইওয়ে হোটেল আড্ডা রেস্টুরেন্ট নামে একটি অংশীদারীত্ব প্রতিষ্ঠান এবং তার পাশে আরেকটি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে। যেখানে সমাজের বিভিন্ন নেত্রী স্থানীয় মানুষের যাতায়াত‌ আছে বলে গোলাম রব্বানী সাহেব আমাদেরকে জানান। উনি জানান কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করা যায় না। আবার উনার কাছ থেকে টাকা ফেরত পাবার আশায় তার কৃত কর্ম সম্বন্ধে কোর্ট, প্রশাসন এবং মিডিয়ার কথা বলা হলেও উনি তার কোন কিছুরই ভ্রুক্ষেপ  করে না। এতে করে বোঝা যায়, হয়তো উনি মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত, নয়তো সে প্রতারণায় সিদ্ধ হস্ত।

এই বিভাগের আরো খবর