বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৭৭৩

প্রযুক্তির অধিক ব্যবহারের সাথে বেড়ে চলেছে অনলাইন প্রতারনা

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২০  

করোনা এর সময় আমাদের সকলকেই মোটামুটি প্রযুক্তি নির্ভর হতে হয়েছে। বাসায় থেকে অফিস এর কাজ, শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস হচ্ছে এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। প্রযুক্তির ছোয়া মুলত সকলকেই পেতে হয়েছে এই সময়ে। কিন্তু সেই সাথে ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে অনেককে। অনলাইন প্রতারণা, ডিজিটাল চুরি সহ আরও অনেক নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হয়েছে কিছু সংখ্যক মানুষের। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, হঠাৎ করেই কম্পিউটার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।


হ্যাকাররা একটি কম্পিউটার থেকে খুব সহজেই অন্য আরেকটি কম্পিউটার এর তথ্য চুরি করতে সক্ষম এবং সেই তথ্য বিক্রি করে বা অন্য কোথাও ব্যবহার করে টাকা উপার্জন করছে। এছাড়াও মানুষ নানাভাবে শিকার হচ্ছে অনলাইন প্রতারণার।


অনলাইনে থাকাকালীন সময়ে মানুষের সামনে একেক সময় একেক ধরনের বিজ্ঞাপন চলে আসে এবং অনেকে সেটা এড়িয়ে গেলেও কিছু মানুষ ভুলবসত সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে ফেলে যার ফলে তাদের কম্পিউটারের তথ্য খুব সহজেই চলে যায় হ্যাকারদের কাছে। এই ধরনের অপরাধ এর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অপরাধী নিজের পরিচয় গোপন রেখে অপর এক ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে থাকে। একটি অনলাইন রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা গিয়েছে যে, অনলাইন ক্লাস চলাকালিন সময়ে হ্যাকারদের দ্বারা অনলাইন প্লাটফর্ম হ্যাক হওয়াসহ সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিলো। এইধরনের অপরাধগুলোকে 'সাইবার ক্রাইম' বলা হয়।
সাইবার নিরাপত্তা অধিদপ্তর এই ধরনের অপরাধ নিয়ে কাজ করে থাকে এবং সাইবার অপরাধ কমিয়ে আনার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালে পাস করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইনের অধিনে এই সকল অনলাইন প্রতারণার শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ধারা ১৮ তে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেয়াইনীভাবে অন্য ব্যক্তির কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস বা কম্পিউটার সিস্টেম এ প্রবেশ করে তাহলে তার শাস্তি হবে ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়ই। কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি নিজে সেই কাজ না করে অপর ব্যক্তিকে করার জন্যে উৎসাহিত করে বা সাহায্য করে তবে সেক্ষেত্রে তার শাস্তি হবে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়ই।


একই আইনের ধারা ২৪ এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জেনেশুনে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, কোনো ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রতারণা করে বা জালিয়াতি করে নিজের পরিচয় লুকিয়ে অন্য ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে অবৈধ কোনো কাজ করে তবে সেই ব্যক্তির শাস্তি হচ্ছে অনধিক ৫(পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দন্ড।


এবং যদি কোনো ব্যক্তি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করেন, তাহলে তার শাস্তি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড বা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।

এছাড়াও মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনলাইনে পন্য ক্রয় করার সময়। কিছু কিছু সময় তারা তাদের পছন্দের পন্যটি পাচ্ছে না, আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে পন্য অর্ডার করে টাকা দিয়েও পন্য পাওয়া যায় না। করোনাকালিন সময়ে অনলাইন কেনা-কাটার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে সকলে, যার ফলে অনলাইন প্রতারকের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। বর্তমান সময়ে ভোক্তারা সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হচ্ছে ফেসবুকের কিছু প্রতারক ব্যবসায়িক পেজ বা গ্রুপ দ্বারা।


তাই এখনই সময় জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির। দেশের জনগণের সচেতনতাই পারে এই ধরনের প্রতারণা ও সাইবার ক্রাইমের পরিমান কমিয়ে আনতে।

মোঃ মাহাবুব উল আলম খান
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এই বিভাগের আরো খবর