শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ১৭ ১৪৩১   ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৫০

নওগাঁয় করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে প্রশাসন সতর্ক

আবু রায়হান রাসেল, নওগাঁ

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২১  

নওগাঁ জেলায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাদেশে দ্বিতীয় ধাপে করোনা পরিস্থিতি বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য বিভাগ যে ৭টি জেলাকে সর্বাত্মক লকডাউনে আওতায় নেয়ার সুপারিশ করেছে নওগাঁ তার মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি অন্য জেলাগুলোর সঙ্গে এ জেলায় করোনা পরিস্থিতি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুইই বেড়েছে।


জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি সদর হাসপাতাল। কোভিড-১৯ এর জন্য ২০১টি বেড প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৩০টি ও অন্য উপজেলায় ১৭১টি। যেখানে চিকিৎসক রয়েছেন ৭৪ জন এবং নার্স ৮৯ জন। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছেন ১১ জন এবং নার্স ৯ জন। এ ছাড়া জরুর চিকিৎসায় স্থানান্তরের জন্য ৫টি অ্যাম্বুলেন্স আছে।


নওগাঁয় গত ২১ মে থেকে ৩০ মে (১০ দিন) পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রন্তের সংখ্যা ৯৭ জন। এ ছাড়া ৪২৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে, ১৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এবং ১০ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ২৭৪ জনকে ও আরোগ্য লাভ করেছেন ৩১ জন। করোনায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।


গত বছরের মার্চ মাসে করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলা থেকে পিসিআর ল্যাবে ১৫ হাজার ৭১৭ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে ৫ হাজার ২৫৬ ব্যক্তির। প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে জেলায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজার ২১৫ জন। পরীক্ষার অনুপাতে আক্রান্তের হার ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের তুলনায় মৃতের হার ১ দশমিক ৮০ শতাংশ।


নওগাঁ থেকে রোববার (৩০ মে) ১৬৩ জনের নমুনা রাজশাহী আরটিপিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ফলাফল পেতে ৫ থেকে ৭দিন লাগলেও বর্তমানে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রাজশাহী আরটিপিসিআর ল্যাব থেকে পরীক্ষার পর ফলাফল দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল দেয়া হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র সন্দেহজনক নমুনাগুলো রাজশাহীর আরটিপিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়।


এদিকে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত ২৬ মে থেকে জেলার তিনটি সীমান্তর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা ও ধামইরহাটে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সঙ্গে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলার ছোট-বড় কয়েকটি সংযোগ সড়ক রয়েছে। ইতোমধ্যে সেগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং মাইকিং করা হচ্ছে। এসব চেকপোস্টে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়াও যেসব পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হচ্ছে সেসব যানবাহনে ভালোভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে এবং স্যানিটাইজারের ব্যবহার ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বেশকিছু নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও স্থানীয় হাট-বাজার ও গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার ও অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।


মাইক্রোচালক পারভেজ বলেন, ‘তিনদিন জ্বর ও সর্দিতে ভোগার পর গত ১৫ মে নমুনা দেই। অ্যান্টিজেন টেস্ট করার পর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর বাড়িতে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। এখন অনেকটা সুস্থ। শরীরের কোনো ধরনের দুর্বলতা নেই। আবারও নমুনা দেয়ার জন্য এসেছি।’


শহরের চকপ্রসাদ মহল্লার দর্জি আমিনুর রহমান (৫০) বলেন, ‘অনেকদিন থেকেই শরীর দুর্বল। প্রেসার কমে গেছে। ৫/৬ বছর আগে যক্ষ্মা হয়েছিল। চিকিৎসা করার পর ভালো হয়ে যায়। আবারও কাশি শুরু হয়েছে। চিকিৎসক করোনা পরীক্ষার জন্য বলায় হাসপাতালে এসে নমুনা দিয়েছি।’


নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, ‘করোনা রোগীদের চলমান সেবার মধ্যে আলাদা ওয়ার্ড, নমুনা সংগ্রহ ও অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্ট করে ৩০ মিনিট এবং নমুনা রাজশাহীর আরটিপিসিআর এ পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল দেয়া হচ্ছে।’


তিনি আরও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় কিছু উপসর্গ লক্ষ্য করা গেছে। আমাদের সীমান্তবর্তী উপজেলায় মাঠকর্মীদের সক্রিয় করে দেয়া হয়েছে। ছুটির দিনসহ অন্যান্য দিনে নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। নওগাঁতে এখন পর্যন্ত ভারতীয় করোনার কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়নি।’


নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘দেশের যে ৭টি জেলাকে সর্বাত্মক লকডাউনের আওতায় নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে নওগাঁ রয়েছে। তবে জনপ্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো সর্বাত্মক সতর্কাবস্থা নেয়া হয়েছে।’


নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের সঙ্গে জেলার বড় রাস্তার সংযোগগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুই জেলার সীমান্তে মাইকিং করা হচ্ছে যেন কেউ অকারণে যাতায়াত না করে।

এই বিভাগের আরো খবর