সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৮ ১৪৩২   ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১০৩৩

জিন্সের রঙ নীল কেনো?

তরুণ কন্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৯  

স্ট্রেট, স্কিনি, লো ওয়েস্ট, মিড ওয়েস্ট। একই অঙ্গে রোজ রোজ শোভা পায় নতুন রূপ। জিন্সের কথা বলছি আর কি! জিন্সের এমনই কদর যে, এই প্রজন্মের আমির-ফকির সকলেই এই পোশাকে স্বচ্ছন্দ। কিন্তু আমরা কি আদৌ জানি জিন্সের নানা রহস্য? কেনই বা নীল হল এর সাধারণ রং, কেনই বা পকেটের পিছনে দেওয়া হয় একটা ছোট্ট বোতাম?


জিন্স নিয়ে নানা তথ্য জানলে অবাক হতে হয়। জানেন কি, এই বহুল সমাদৃত পোশাকটি প্রথম তৈরি হয়েছিল শ্রমিকদের জন্য? তখন একে বলা হত ‘বুল জিন্স’। সস্তায় শীত গ্রীষ্ম বর্ষা পরা যাবে এমন একটা প্যান্ট তৈরি করাই ছিল জিন্স তৈরির প্রথম উদ্দেশ্য। এবং অবশ্যই টানা অনেক দিন পরা যাবে, ঘন ঘন কাচাকুচির ঝঞ্ঝাট পোহাতে হবে না।

‘ডেনিম’ কাপড়ের জিন্সই প্রথম থেকে সবচেয়ে বেশি প্রচলিতও আরামদায়ক। ডেনিম শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘সেরজে দে নিমস’ থেকে। নিমস শহরের দরজিরা শক্ত কাপড়ের এই পোশাক প্রথম বানান। তাই জিন্সের দুনিয়ায় ডেনিমের কদরই আলাদা।

জিন্সের রং নীল করার জন্য নীল রং ব্যবহার করা হত। এই নীলের বেশির ভাগটাই আসত ভারত থেকে। শ্রমিকদের পোশাক সহজেই ময়লা হয়ে যেত। এ দিকে কালো রং করলে তাতে গরম হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। তাই নোংরা হলেও যাতে বোঝা না যায় আবার গরমও বেশি না লাগে, তাই গাঢ় নীল রং বাছা হয়।

প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এই পোশাকটি বাজারজাত হয় ১৮৭৩ সালে। শ্রমিকের পোশাকটিকে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করেন লেভি স্ত্রাউস। তখন পোশাকটিকে বলা হত ওয়েস্ট ওভারঅলস।

পঞ্চাশের দশকে হলিউড দায়িত্ব নেয় জিন্সকে জনতার সামনে নিয়ে আসার। আরো পরিষ্কার করে বললে হলিউড অভিনেতা জেমস ডিন এই পোশাককে জনপ্রিয় করে তোলেন ধীরে ধীরে। তার অভিনীত ছবি 'রেবেল উইদাউট এ কজ'-এ তার জিন্স পরিহিত ভাবমূর্তি সেই সময়ে যুবসমাজকে দারুণ প্রভাবিত করে।

জিন্সের পকেটে যে ধাতব বোতামটি থাকে, সেটি শুধু ফ্যাশনের কারণেই নয়। জেকব ডেভিস নামে এক দর্জি জিন্সের ব্যাক পকেটে এই বোতামটির আমদানি করেন। পুরুষরা বেশির ভাগ সময় পিছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখেন। যাতে ভারী জিনিস রাখলেও তা না ছেঁড়ে, আরো মজবুতভাবে ধরে রাখা যায় জিনিস, সে কারণেই এই বোতামটি লাগান তিনি।

জিন্সের প্যান্টে ছোট পকেট কেন থাকে জানেন? ১৮০০ শতকে রোদে পোড়া তামাটে চেহারার শ্রমিকরা মাঠেঘাটে কঠিন পরিশ্রম করতেন। সে সময় ঘড়ি হাতে নয়, বরং পকেটে রাখার রীতি ছিল। শ্রমিকদের পোশাকের সঙ্গে তাই যুক্ত হয় সামনে একটি ছোট পকেট, যাতে তারা সহজেই ঘড়ি পকেটেই রাখতে পারেন।

১৯৯৫ সালে ভারতে প্রথম জিন্স তৈরি করে অরবিন্দ মিল। ধীরে ধীরে বাজারে আসে লি, লিভাইস-এর মতো সংস্থাগুলো।

সোনা বা হিরের চেয়েও বেশি দামি এক জোড়া সিক্রেট সার্কাস জিনস্-এর দাম। প্রায় ১৩ লক্ষ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে মেলে এই জিন্স। এটিই পৃথিবীর সবথেকে দামি জিন্স। এছাড়া মার্কিন মুলুকের লস অ্যাঞ্জেলসে এক সংস্থার একটি বিশেষ জিন্স পাওয়া যায়, যার দাম প্রায় ৪৩ হাজার টাকা।

পৃথিবীর ৫০ শতাংশের বেশি জিন্স ভারত ও চিনে তৈরি হয়। প্রতিবছর ভারতে আনুমানিক ৬০০০ কোটি টাকার জিন্স বিক্রি হয়।