রোববার   ০৯ মার্চ ২০২৫   ফাল্গুন ২৫ ১৪৩১   ০৯ রমজান ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৪

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক কুমিল্লার নাভিদ নওরোজ

শেখ ফরিদ উদ্দিন

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২৫  

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের তরুণ কাণ্ডারীদের উদ্যোগে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটিতে যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক এর দায়িত্ব পেয়েছেন কুমিল্লার কৃতি সন্তান নাভিদ নওরোজ শাহ্।

 

২০২৪ সালে ছাত্র জনতার অভূতপূর্ব রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের জনগণ। শুধু দেশের ইতিহাসেই নয় সারা বিশ্বেই এই অভ্যুত্থান নজিরবিহীন খ্যাতি লাভ করেছে এবং বিশ্বের তাবৎ নির্যাতিত জনপদের মানুষের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।

 

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হলেও গত ৫৩ বছরে এ দেশের মানুষের প্রকৃত মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি অবশেষে গত বছর জুলাই মাসে রাষ্ট্র কাঠামোর ব্যর্থতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে ছাত্র-জনতা।

 

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুরু হওয়া প্রতিরোধে হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার যখন বেআইনিভাবে গুলি করে শত শত মানুষ হত্যা করে তখন তা পরিণত হয় সরকার পতনের আন্দোলনে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তরুণ বিপ্লবীদের প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটির সম্মিলিত উদ্যোগে সময়ের প্রয়োজনে গঠিত হলো নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি।

 

আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম কে আহ্বায়ক এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী পরীক্ষিত নেতা আখতার হোসেন কে সদস্য সচিব করে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে আছেন নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী এবং অন্যান্যদের সাথে যুগ্ন মুখ্য সমন্বয়ক এর দায়িত্ব পেয়েছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রন্টের অন্যতম নেতা নাভিদ নওরোজ শাহ্।

 

নাভিদ বিগত এক যুগ ধরেই বিভিন্ন অধিকার আন্দোলন এবং সামাজিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত। প্রতিবন্ধী মানুষের সংগঠন বি-স্ক্যান এর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার তিনি। টিপাইমুখ বাঁধ আন্দোলন সহ পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় আন্দোলন এবং নারী অধিকার রক্ষায় তিনি সোচ্চার ছিলেন। দেশে ও বিদেশে মানবাধিকার আইন নিয়ে বেশ কয়েকটি স্ট্রীট ল’ প্রজেক্টে তিনি অংশ নিয়েছেন।

 

তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ল’ সোসাইটি এবং ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশান এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে আইন ও অধিকার নিয়ে কাজ করছেন বহু বছর। কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠনের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারি হিসেবে মেডিকেল ক্যাম্প, জাকাত ক্যাম্পেইন আয়োজন করেছেন।

 

বর্তমানে তরুণ উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) এর ঢাকা আপটাউন চ্যাপ্টারের সহ সভাপতি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন সামাজিক ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র হিসেবে ২০১৫ সালের নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলন, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মূলধারায় সম্পৃক্ত হয়ে জাতির প্রয়োজনে এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করেন।

 

১৭ জুলাই নাভিদ ও তার সহযোদ্ধারা বেআইনিভাবে গ্রেফতারকৃত আন্দোলনকারীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেবার ঘোষণা দেন। ১৯ জুলাই তিনি ঢাকা ব্লকেড আন্দোলনকারীদের গণভবন অভিমুখে মার্চ করার একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে বিপুল সাড়া পান কিন্তু তার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়।

 

২০ জুলাই নাভিদ ও তার সহযোদ্ধাদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে টিয়ারশেল বর্ষণ হলে তারা সিদ্ধান্ত নেন সরকারের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে যাবেন। পরবর্তীতে তারা সিনিয়র আইনজীবি সারা হোসেন, অনীক আর হক, মানজুর আল মতিন, রাশনা ইমাম, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সহ অন্যান্যদের অনুরোধ করে একত্রিত করেন এবং ফলশ্রুতিতে সুপ্রিম কোর্টে আন্দোলনের পক্ষে কার্যক্রম শুরু হয়।

 

এই উদ্যোগ থেকেই জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সূত্রপাত এবং নাভিদ সেখানে ডকুমেন্টেশনের দায়িত্ব পান। ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠন কে জাগিয়ে তোলেন এবং আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি আদায় করে সরকারের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করেন।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারফিউ অমান্য করে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা আন্দোলনের সমন্বয়কবৃন্দ, পত্রিকা ও টেলিভিশন অফিস, এবং সুশীল সমাজের নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করেন। অবশেষে আসে ৫ অগাস্টের সেই কাঙ্ক্ষিত সকাল যেদিন তারা প্রাণ হাতে নিয়ে বের হয়ে পরেন গণভবন অভিমুখে।

 

নাভিদ নওরোজের এসএসসি ও এইচএসসি কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে। দুটো পরীক্ষাতেই তিনি কুমিল্লা বোর্ডে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। পরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক শেষ করে তিনি মানবাধিকার আইন নিয়ে পড়তে চলে যান যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

 

দেশে ফিরে এসে উদ্যোক্তা ও অধিকারকর্মী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার বাবা ড. শাহ্ মো: সেলিম কুমিল্লা জেলা বিএনপির কিংবদন্তী নেতা এবং বাংলাদেশের বেসরকারী মেডিক্যাল শিক্ষায় একজন অগ্রদূত। তার মাতা ড. জেবুন নাহার লিলি ছাত্রদলের সংগ্রামী নেত্রী ছিলেন এবং পেশায় শিক্ষক হয়ে নারী অধিকার নিয়ে কুমিল্লায় গবেষণা ও আন্দোলন করছেন।

এই বিভাগের আরো খবর