রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৭ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৫৪

জবি টু কুমিল্লাঃ স্বপ্নের বাস যাত্রা গোমতী

আহমেদ সানি

প্রকাশিত: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

"গোমতী" এই নামটি হাজারো জবিস্থ কুমিল্লার শিক্ষাথীদের এক আবেগ ভালোবাসার নাম।

দেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা থেকে কুমিল্লা রুটে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করার উদ্দেশ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী থেকে যাত্রা শুরু হয় গোমতী নামক ভালোবাসার। প্রায় ৩ বছর ধরে জবি- কুমিল্লা রুটে চলছে ভালোবাসার বাস গোমতী।

বাসটিতে ৪৬ আসন থাকলেও প্রতিদিন এই বাসে কুমিল্লা, নোয়াখালী,  চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,চাঁদপুর এর প্রায় ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। এমনকি যখন ক্যাম্পাস বন্ধ দেওয়া হয় তখন বাসে প্রায় ১০০ এর উপর শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করে। যা সিটের তুলনায় দিগুন। গোমতী বাসের সিটগুলোর মতই গেইটও উপচে থাকে শিক্ষার্থীদের দ্বারা। তারা গেটে দাঁড়িয়ে কোনদিক থেকে দ্রুত যাওয়া যাবে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন, কখনো বা ট্রাফিক পুলিশকে সিগন্যাল ছাড়ানোর অনুরোধ করেন।

ঢাকা থেকে কুমিল্লা এবং কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসা যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ভেতরে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে নিরাপদ লাগে। প্রতিদিন সকালে শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা পুলিশ লাইন হয়ে যাত্রা শুরু করে শেষ গন্তব্য হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।আসা-যাওয়ায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন বাসটি কুমিল্লা থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং ক্যাম্পাস থেকে বিকাল সাড়ে ৩টায় কুমিল্লার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

তাছাড়া জ্যামের একঘেয়েমি কাটাতে সবাই মিলে বাসের মধ্যে গান ধরেন, হোক সেটা সুরো কিংবা বেসুরো গলায়, আবার কখনো কখনো বাসের মধ্যেই আয়োজন হয় খাওয়া দাওয়ার। তখন আর কারোরই ক্লান্তিবোধটা থাকে না। আর এসব দৃশ্য দেখে রাস্তার লোকেরা সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এ যেনো এক অন্য রকম মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সাথে ক্যাম্পাসের প্রথম স্মৃতি হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস। আর সেটি যদি হয় ভালোবাসার 'গোমতী' তবে তো কোনো কথাই নেই। ক্লাস-পরীক্ষা কিংবা প্রেজেন্টেশন যাই হোক না কেনো এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেয় ভালোবাসার বাস 'গোমতী '।

এই বাসের যাত্রী হতে অনেক সাধনা ও তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য প্রমাণিত করতে হয়। এ বাসের যাত্রী হতে হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। সকাল-বিকাল যখনই সে ছুটে রাজপথে, কত যে উৎসুক চাহনী চেয়ে থাকে তার পানে! সে কত শিক্ষার্থীর আনন্দ-বেদনার সামিল! যাত্রা পথে কত সুর-বেসুরা কণ্ঠ গেয়ে ওঠে গান। ক্লাস শেষে ফেরার পথে সে সরব হয়ে ওঠে গল্প-আড্ডা আর গানে। গল্প হয় হাসি-খুশির, কোনোটা বা বেদনায় সিক্ত। আর এই হাসি-খুশি আর দুঃখ-বেদনাকে সঙ্গী করেই তার পথচলা। এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নিয়ে হাজারো অনুভূতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের।

নিয়মিত যাতায়াত করা শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন,আমাদের প্রিয় বাস গোমতী,  ভালোবাসার বাস, আসন নেই, হোক ঠাসাঠাসি, তবু ও তো নিজেদের, বাঁদুড়ঝোলা হতেও আপত্তি নেই। সারাদিনের ক্লাস শেষে ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরার পথে এই 'গোমতী' বাসই হয়ে উঠেছে নতুন স্বপ্নের অনুপ্রেরণা। এই গোমতী বাসটি হয়তো আহামরি কিছুই নয়, এতে নেই এসি, নেই ভালো আসনও, সবার জন্য নির্ধারিত জায়গাও নেই, অনেক সময় হয়তো দাঁড়িয়ে কিংবা ঝুলে যেতে হয়। তারপরও অনেকে স্বপ্ন বুনতে থাকে এই বাসের কোলে বসে। এই বাসটি জন্য আবেগ সত্যিই বড্ড অদ্ভুত।

বাসে নিয়মিত যাতায়াত করা শিক্ষার্থী এম এ কাদের  বলেন, আমাদের এই গোমতী বাস জবি-কুমিল্লা রুটে ৩ বছর ধরে চলছে। কুমিল্লা ছাড়াও আশেপাশের কয়েকটি জেলার শিক্ষার্থীরা এই বাসে যাতায়াতের ফলে খুব উপকৃত হচ্ছে। বাস উদ্বোধনের পর থেকে সবার মধ্যে একটা উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করছে।শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা থেকে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পেরে সবাই খুব খুশি। আমাদের বাসে প্রতিদিন সিটের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। গোমতী আমাদের কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের জন্য আবেগ ও অনুভূতির নাম। বাসের সিট গুলোর মতই গেইটও উপচে পড়া ভিড় থাকে শিক্ষার্থীদের দ্বারা। সাধারণের কাছে এই বাস হয়তো কেবলই শিক্ষার্থী বহনকারী বাহন, কিন্তু আমরাই জানি এই বাস তাদের সবার কতটা আপন, ঘরে ফেরার কত বড় নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এই বাস ঘিরেই তাদের কত হাজারো স্মৃতি, হাজারো গল্প রয়েছে।

নিয়মিত যাতায়াত করা আরেক শিক্ষার্থী সোমা বলেন, আমাদের গোমতী বাস কেবল একটি বাস নয়, এটা আমাদের কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের এক আবেগের জায়গা। গণপরিবহনের অন্যান্য কোনো বাস আমাদের মনে সে অনুভূতি জাগায় না। কারণ গোমতী আমাদের স্বপ্নের বাস, আকাঙ্ক্ষার বস্তু। গণপরিবহনে উঠলে দুর্ঘটনার ভয় সবসময় কাজ করে, আর হ্যারেজমেন্টের ব্যাপারটা আছেই। কিন্তু এই বাসে নিজেকে কেন জানি খুব নিরাপদ মনে হয়।’

এই বিভাগের আরো খবর