বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৮০১

কারাগারে মাটি কাটছে জবি শিক্ষার্থী খাদিজা

ফয়সাল আহমেদ, জবি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

১ বছর পরও জামিন হয়নি ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টে আটক হওয়া জবি শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরার।

১ বছর পরও জামিন হয়নি ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টে আটক হওয়া জবি শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরার।

২০২০ সালে নিউ মার্কেট এবং কলাবাগান থানায় একই অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছিল তখন তার  সতেরো বছর চললেও প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে মামলা দুটি করা হয় এবং ২০২২ সালে গ্রেফতার কয়া হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরাকে ।

২০২৩ সালে আগস্ট মাসে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বদলের কথা উঠলেও বদলায়নি খাদিজার ভাগ্য। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে, পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।খাদিজা বলেন, অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের প্রশ্নগুলো পূর্ব নির্ধারিত ছিলো, সে প্রশ্ন  সম্পর্কে খাদিজা কিছুই জানতো না । খাদিজা নিজে থেকে কোনো প্রশ্ন করেনি। সে অনুষ্ঠানের অতিথিকেও চিনতো না।

 দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় খাদিজার শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিনযাপন করছেন তার পরিবার। তার পরিবারের দাবি, খাদিজার কিডনিতে পাথর ছিল ঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয় নাই। খাদিজা তার বোনকে জানান, ওর শরীর একদমই ভালো থাকে না। কারাগারে ওর পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে না। মানসিকভাবে একদম ভেঙে পড়েছে। খাদিজার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং একাডেমিক নথি অনুসারে খাদিজার নামে ২০২০ সালে যখন যে মামলা হয়, তখন তার বয়স ১৭ বছর। তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে মামলাটি করা হয়।

কারাগারে থেকে খাদিজা পড়াশোনা করতে পারছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ২য় সেমিস্টারের থাকতো। কারাগারে এখন পড়তে পারছেন না। পড়াশোনা ও পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে তাকে আগে নতুন সেমিস্টারে ভর্তি হতে হবে। তারপর সব ডকুমেন্ট দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে পড়াশোনা করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারবো। কয়েকদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আবেদন করবেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, কারাগারে কাজ করে । কনডেম সেলে রাখার পরে কারাগারে খাদিজাকে দিয়ে মাটি কাটানো হয়েছে, ঘাস কাটানো হয়েছে। বর্তমানে সে কাঁথা সেলাই এর কাজ করে। ১৭-১৮ দিনের মধ্যে তাকে ১টা কাঁথা সেলাই করতে হয়। জামিন স্থগিত হওয়ার পর মামলায় এখন বিকল্প কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। 
আদালত ও আইনজীবী সূত্রে  জানা যায়, ২০২০ সালে নিউ মার্কেট এবং কলাবাগান থানায় একই অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছিল। তাকে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০২২ এর আগস্টে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইবার ট্রাইব্যুনালে কয়েকবার জামিন চাওয়ার পর না দেওয়ায়, উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। উচ্চ আদালত ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর  আপিল আবেদন গ্রহণ করেন দুই মামলায়। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আপিল মঞ্জুর করে জামিন দেন। দুটি আপিলে দেওয়া রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ স্থগিতাদেশ পান। পরে খাদিজার পক্ষে সেই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ১০ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। সেদিন শুনানি হওয়ার পর জুলাইয়ের ১০ তারিখে আবার দিন ধার্য করা হয় এবং ওই দিন শুনানি শেষে আবারও আপিলের শুনানি চারমাসের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার আদেশ হয়। পরে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই খাদিজার চার্জ শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। সাইবার ট্রাইব্যুনাল সময় মঞ্জুর করে আগামী ৩০শে নভেম্বর চার্জ শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, খাদিজার বিরুদ্ধে দুটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক খাইরুল ইসলাম এবং কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক আরিফ হোসেন। দুজন বাদীই ইউটিউবে খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেনের ভিডিও দেখতে পান। ২০২০ সালের ১১ ও ১৯ অক্টোবর তারা দু’জনে নিজ থানায় বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। আদালত এ চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সঞ্চালক আটক হলেও মেজর দেলোয়ার এখনো পলাতক রয়েছেন।
খাদিজার বড় বোন মুনিরা জাহান জানিয়েছেন, কারাগারে খাদিজার পেছনে প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া লাগে। আমরা প্রতি মাসে দুইবার দেখা করি। এই পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়েছে। 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আলম সওদাগর বলেন, এক বছর যাবৎ খাদিজা ক্লাসে অনুপস্থিত। খাদিজা খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। কিন্ত গত এক বছরে কারাগারে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ও ছোট মানুষ। বুঝতে পারেনি বিষয়টি এমন হবে। আমাদের কী-ই বা করার আছে। আমরা কি করতে পারব। আমরা তো আইনের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারব না। আমি খুব করে চাই দ্রুত ওর জামিন হোক, ক্লাসে ফিরে আসুক।

এই বিভাগের আরো খবর