বৃহস্পতিবার   ৩১ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ১৬ ১৪৩১   ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৮৭

করোনা নিয়ন্ত্রণে ভারতকে অনুসরণ করতে পারে বাংলাদেশ

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১  

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচির প্রতি ভারত সরকার খুবই শ্রদ্ধাশীল। কুমুদিনী কমপ্লেক্সের শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা মানসম্পন্ন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে কুমুদিনী হাসপাতাল যেভাবে মানসম্পন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে আমি তার জন্য এর প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। কুমুদিনী কমপ্লেক্সে এসে আমি খুবই আনন্দিত।

আজ শনিবার মির্জাপুর কুমুদিনী কমপ্লেক্স পরিদর্শন ও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত ভারতের ৭ সেনা সদস্যের স্মৃতিফলক উন্মোচনে এসে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন।

হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত খুবই কাছাকাছি থেকে কভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যাচ্ছে। আমাদের দেশ ভারতে কভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আমরা এখন বাংলাদেশের জন্য সাধ্যমত সব কিছুই করব। কভিড নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ভারতের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। ভারত করোনা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে অংশগ্রহণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। কভিড মোকাবেলায় ভারত ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে টিকা, অক্সিজেন ও অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও আমরা আমাদের চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান বিনিময়ে বদ্ধপরিকর।

হাইকমিশনার ও হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (পাবলিক কুটনতি) দিপ্তী আলংঘাটসহ ৬ সদস্যের একটি দল সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে পৌঁছলে কুমুদিনী নার্সিং স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা, পরিচালক শম্পা সাহা, পরিচালক মহাবীর পতি, পরিচালক একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রতিভা মুৎসুদ্দি, পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায়, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ হালিম, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) মনসুর মুসা, মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হক, কুমুদিনী হাসপাতালের এজিএম অনিমেষ ভৌমিক উপস্থিত ছিলেন।

কুমুদিনী লাইব্রেরিতে চা চক্র শেষে হাইকমিশনারকে কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সেবামূলক কাজকর্ম, বিশ্বযুদ্ধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা দানরীর রণদা প্রসাদ সাহার অবদানের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। পরে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত ভারতের ৭ সেনা সদস্যকে দাহ করার স্থানে (কুমুদিনী হাসপাতালের প্রধান ফটকের পূর্বপাশে) তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও ভারতেশ্বরী হোমস পরিদর্শন করেন। দুপুরে ভারতেশ্বরী হোমসে খাবার শেষে তিনটায় আনন্দ নিকেতনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

সেনা সদস্যদের দাহ করার প্রত্যক্ষদর্শী গোপাল চন্দ্র শীল জানান, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মির্জাপুর হানাদার মুক্ত হয়। ওইদিন লোকমুখে জানতে পারেন ভারতের সেনারা হেটে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চত্তর এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনারা তাদের লক্ষ করে গুলি চালায়। গুলিতে কয়েকজন মারা গেছে। একথা শুনে হাসপাতালের দক্ষিণপাশে নদীর পারে আসি। নদী পার হতে না পেরে দক্ষিণপাশে লোকজনের সঙ্গে বসে থাকি। এ সময় কুমুদিনী হাসপাতালের লোকজন পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত ভারতের ২ সেনাকে হাসপাতালের সামনে নদীর পারে এনে দাহ করেন। এ দৃশ্য দেখেই বাড়ি চলে আসেন বলে তিনি জানান।

কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে আহত ভারতের ২০ সেনা সদস্যকে কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে তারা সুস্থ হয়ে ফিরে যান। এ ছাড়া বর্তমান উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় পাকিস্তানি সেনারা ভারতের ৭ সেনা সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের কুমুদিনী হাসপাতালের সামনে নদীর পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাহ করেন।

তিনি বলেন, তাদের স্মরণে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট্রের উদ্যোগে কমপ্লেক্স নির্মিত একটি স্মৃতিফলকটি আজ শনিবার উন্মোচন করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।

বিকেল চারটায় হাইকমিশনার মির্জাপুর ত্যাগ করেন বলে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ রিজাউল হক নিশ্চিত করেন।

এই বিভাগের আরো খবর