বৃহস্পতিবার   ৩১ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ১৫ ১৪৩১   ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৯৯

ঈশা খাঁর সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২১  

বাংলার ইতিহাসে বারো ভূঁইয়া বা প্রতাপশালী বারোজন জমিদারদের অন্যতম বীর ঈশা খাঁ। তার মৃত্যুর পর তাকে সমাহিত করা হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর গ্রামে। দীর্ঘদিন তার কবরটি অযত্নে-অবহেলায় ছিল। 

গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তার সমাধিতে দেওয়া হচ্ছে নতুনত্ব ও আধুনিকতার ছোঁয়া। এরই মধ্যে নতুন স্থাপনার কাজও শুরু হয়েছে।

ঈশা খাঁর অরক্ষিত সমাধিস্থল (কবর) যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমাধি স্তম্ভ সাড়ে ১৭ ফুট উচ্চতার এবং ২০ ফুট প্রস্থের লাল সিরামিক ইট দিয়ে প্রাচীন নির্মাণ কৌশলসমৃদ্ধ একটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমাধিস্থ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে দশ লাখ টাকা।

বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আকন্দ বলেন, ৩০-৩৫ বছর আগে প্রত্নতত্ত বিভাগ বক্তারপুর পুরোন দীঘির পশ্চিমে পারে থাকা কবরটি ঈশা খাঁর সমাধি বলে চিহ্নিত করেন। পরে লোকজন বাঁশের বেড়া দিয়ে কবরটি সংরক্ষণের চেষ্টা করে। এরপর ২০০৪ সালে প্রথম উপজেলা প্রশাসন ইটের দেয়াল তুলে কবরটি ঘিরে দেয়। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কবরটির চারদিকে ইটের দেয়াল এবং উপরে লোহার বেড়া বেষ্টিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কয়েক মাস আগে প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাধি স্থানে যাওয়ার সড়কটি ১০ ফুট প্রশস্ত করে সংস্কার করে গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়। এখন সমাধি স্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, এখানে মাটি খুঁড়লে প্রাচীন ইট বের হয়। ঈশা খাঁর কবরের স্থানটি একটু উঁচু ঢিবির মতো ছিল। পূর্বপুরুষরা বলে গেছে এটি কবরস্থান। প্রত্নতত্ত বিভাগ স্থানটি খননও করেছিল। প্রাচীন ইট ও কবর আকৃতির সমাধি আবিষ্কৃত হয়। পরে তারা জানা যায় এটি ঈশা খাঁর কবর।

বিভিন্ন তথ্যমতে জানা গেছে, ঈশা খাঁ ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ছিলেন ঈশা খাঁ। ন্যায়পরায়ণ শাসক ও বীরত্বের প্রতীক হয়ে তিনি ঠাঁই নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। মুসলিম এই শাসকের রাজধানী ছিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ। মুঘল শাসকদের সঙ্গে তার একাধিক যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধের জন্য এগারসিন্ধু ও বক্তারপুরে দুর্গ স্থাপন করেছিলেন। 

জীবনের শেষদিকে সোনারগাঁয়ে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি অবস্থান নেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর দুর্গে। সেখানে একজন প্রখ্যাত হেকিমের চিকিৎসা গ্রহণকালে ৭০ বছর বয়সে ১৫৯৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তার। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে সমাহিত করা হয় বক্তারপুর দুর্গের দীঘির পশ্চিমপাড়ে। কালের পরিক্রমায় অযত্ন-অবহেলায় এক সময় হারিয়ে যায় সমাধিচিহ্ন। 

তার বীরত্ব, শাসন, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ও ধর্মপরায়ণতা নিয়ে নানা জল্পনা ও কল্পকাহিনী থাকলেও ইতিহাসের কোথাও তার সমাধিস্থলের কথা উল্লেখ নেই। প্রত্নতত্ত বিভাগ দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করে বক্তারপুরের ধ্বংস হয়ে যাওয়া দুর্গে একটি প্রাচীন সমাধির সন্ধান পায়। নানা তথ্য-উপাত্ত ও ইতিহাস বিশ্লেষণ শেষে প্রত্নতত্ত বিভাগ নিশ্চিত হয় যে সমাধিটি ঈশা খাঁর।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর অরক্ষিত সমাধি স্থানটি (কবর) যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাধিস্থ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সমাধি স্থানটি সাড়ে ১৭ ফুট উচ্চতার এবং ২০ ফুট প্রস্থের প্রাচীন নির্মাণ কৌশলসমৃদ্ধ একটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর লাল সিরামিক ইটের সমাধিস্থ নির্মাণ করা হবে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ঈশা খাঁর বীরত্বের ইতিহাস এবং বাংলায় তার অবদান তুলে ধরা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিবলী সাদিক বলেন, দীর্ঘদিন যাবত তার কবরটি অযত্নে-অবহেলায় ছিল। ঈশা খাঁর অরক্ষিত সমাধিস্থল (কবর) যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

এই বিভাগের আরো খবর